পাঠক মত

শব্দদূষণ কমাবে কে!

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

রাকিব হাসান
আজকের নাগরিক জীবনের একটি নীরব বিপদ হলো শব্দদূষণ। আমরা প্রায়শই বায়ুদূষণ ও জলদূষণ নিয়ে আলোচনা করি, কিন্তু শব্দদূষণের ভয়াবহ প্রভাব যেন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। পরিবেশ দূষণের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হলেও শব্দদূষণ প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। অথচ এটি একটি মারাত্মক সমস্যা, যা দিনে দিনে আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, এমনকি সমাজের সামগ্রিক পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শব্দদূষণের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা না হলে এর সমাধান করা সম্ভব হবে না। মূলত কয়েকটি বড় উৎস শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। যেমন : যানবাহনের হর্ণ, আমাদের শহরগুলোতে যানজট একটি বড় সমস্যা। এর সঙ্গে অযথা হর্ণ বাজানো শব্দদূষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে বাস, ট্রাক, রিকশা, মোটরবাইক ইত্যাদির হর্ণের অসহ্য শব্দ পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে। নির্মাণকাজ, ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে নির্মাণকাজ দিন দিন বাড়ছে। বড় বড় যন্ত্রপাতি, ড্রিলিং মেশিন, ইট ভাঙার শব্দ, এবং কংক্রিট মেশানোর আওয়াজ শহরের বাসিন্দাদের জীবনে অস্থিরতা আনছে। সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ের প্রোগ্রাম বা মিছিলের সময় উচ্চস্বরে লাউডস্পিকার বাজানো সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শব্দদূষণ মানুষের জীবনে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর কিছু উলেস্নখযোগ্য প্রভাব হলো: দীর্ঘমেয়াদি শব্দদূষণে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং শ্রবণশক্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় শব্দের কারণে মানুষের মানসিক অশান্তি বেড়ে যায়। এটি বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং একঘেয়েমির জন্ম দেয়, উচ্চ শব্দের কারণে ঘুম ঠিকমতো না হওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। শব্দদূষণ শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি আরও ভয়াবহ, কারণ তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি সংবেদনশীল, শব্দদূষণের কারণে বন্যপ্রাণীর প্রজনন এবং আচরণে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। তারা বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এছাড়াও পরোক্ষভাবে শব্দদূষণ আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে যাচ্ছে। শব্দদূষণ কমানোর জন্য ব্যক্তি, সমাজ এবং প্রশাসনসহ সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। এটি শুধুমাত্র পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকি। সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদের পরিবেশকে নীরব ও শান্তিপূর্ণ করতে। তাই শব্দের সীমা থাকুক, জীবনে আনন্দ ফিরে আসুক। রাকিব হাসান সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ