শিশু শিক্ষা হোক আনন্দঘন পরিবেশে

সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিশু শিক্ষার পরিবেশ তৈরি এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। প্রতিটি বিদ্যালয় শিশুর আনন্দঘন খেলার ঘর হোক, ভীতির জায়গা দূর করে ভালোবাসা জন্ম দিতে হবে। শিশুরা যত বিদ্যালয়মুখী হবে তত আমাদের আগামীর প্রজন্মের উন্নয়নের সম্ভাবনা আশানুরূপ হবে এবং ভবিষ্যৎ জাতি তত উন্নত হবে।

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আরিফ আনজুম
শিক্ষার প্রথম দর্শনধারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ হতে হবে আনন্দঘন ও শিশুদের মনোনিবেশ হওয়ার মতো সুন্দর ও সাবলীল। নয়তো শিশু বিদ্যালয়মুখী হতে অপারগ হবে। শিক্ষা গ্রহণ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা না বললেই নয়। 'আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের শিশুদের শিক্ষা পরিবেশ কেমন হওয়া চাই। শিক্ষা ভীতি নয়, বিদ্যা গ্রহণ বোঝা নয়। শিক্ষা গ্রহণ আমাদের চিন্তার অন্ধকার গলিতে আলোর প্রবেশ ঘটিয়ে দেয়। মানব আত্মার উন্নতি এবং জড় বুদ্ধিকে মুক্ত করতে শিক্ষা প্রয়োজন। একটি জাতিকে উন্নতির শিখড়ে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই শিক্ষার বিকল্প আর কিছু নেই। আমাদের দেশে পূর্ব থেকেই শিক্ষার সূচনালগ্ন পরিবেশ প্রেক্ষাপটে বেশ জটিল। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। এই বয়সে শিশুরা মুক্ত পরিবেশে আনন্দের মাধ্যম শিক্ষা নিবে। সেখানে মুখস্থনির্ভর বিদ্যাচর্চা শিশুর মনের উর্বর ভূমিকে নষ্ট করে ফেলছে সূচনার প্রারম্ভিক সময়টাতে। শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না, বিদ্যালয়ের প্রতি থাকে চরম অনীহা। বিদ্যালয়মুখী করার চেয়ে বরং শিশুদের বিদ্যালয় বিমুখী করতে অগ্রসর হচ্ছে সামনের শিক্ষার উন্নতির পথ। এই দিকে আমাদের বিশেষ সুনজর রাখা জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থা তথা একঘেয়েমিপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতি পড়াশোনাকে শিশুদের জন্য কঠিন করে তোলে। ফলে শিশু মন থেকে পড়াশোনা বা বিদ্যা অর্জনে প্রতি বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। মুখস্থ নির্ভর দৌড়ে পাস করার মনোভাবে, প্রকৃত শিক্ষা নেওয়া বিষয়টি গৌণ হয়ে রয়েছে। শিশুরা অঙ্কুরিত উদ্ভিদের মতো। বিশেষ যত্নে লালিত পালিত করা না গেলে অকালে ঝরে যাবার অপার সম্ভাবনা প্রকট থাকে। আনন্দঘন শিখন পরিবেশ শিশুরা পছন্দ করে। আনন্দঘন পরিবেশ শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আগ্রহী করে তোলে শিশুদের। গতানুগতিক বাঁধাধরা মুখস্তনির্ভর বিদ্যা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। শিশুরা খেলতে খেলতে শিখে নিবে সব কিছু। তাদের চাহিদা অনুপাতিক শিক্ষা দিতে হবে। শিশুদের বয়সের চেয়ে মাত্রারিক্ত শিক্ষা দিতে চাইলেই হিতে বিপরীত হবে। শিশুরা তাদের পছন্দমতো, তাদের চাহিদা অনুপাতিক হারে ইচ্ছেমতো ছবি আঁকবে, একে অপরের সঙ্গে গল্প করবে। কেননা নিজেদের ভেতরের ভাব প্রকাশ জরুরি শিশুদের জন্য। ফলে চিন্তার আদান-প্রদানে নতুন চিন্তার খোরাক জোগায় হয়। অতিরিক্ত চাপে শিশু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সৃজনশীল কাজের সুযোগ দিতে হবে বিদ্যালয়ের প্রতি আর্কষণ বাড়ানোর জন্য। শিশুদের কথা ও সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাদের সঙ্গে একদম বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলো সংস্কার করা অত্যাবশ্যক ও জরুরি। আমাদের গোড়ায় গলদ রেখে মুক্তবুদ্ধির জন্য শিক্ষাচর্চায় শিশুদের ভবিষ্যতে আগ্রহী করে তোলা যাবে, তা ভাবা বোকামি। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। সমগ্রটাই চলে প্রতিযোগিতা ও মুখস্থনির্ভর বিদ্যার ওপর ভর দিয়ে, যা বর্তমান যুগের জন্য অসঙ্গতিপূর্ণ বলা চলে। শিশুদের অবশ্যই উপযুক্ত পদ্ধতি ও কলাকৌশল ব্যবহার করে পাঠদান করতে হবে। খেলাধুলা, ছবি আঁকার মাধ্যম বাদ দিয়ে বিদ্যালয়গুলোতে কোমলমতি শিশুদের ঘণ্টা পর ঘণ্টা একই ক্লাসরুমে বসে রেখে পাঠদান করা হয়। পাঠ্যবই মুখস্থ করার তালিম চলে। শিশুদের মনে বিরূপ ধারণা জন্ম নেয়। বিদ্যালয় ছুটি হলে বা বের হতে পারলেই যেন বাঁচে তারা। শিশুদের পাঠাভ্যাস তৈরি করতে শিশুবান্ধব পাঠাগার খুবই প্রয়োজনীয়। শিক্ষকরা মজার মজার গল্প পড়ে শোনাবে, শিশুরা আনন্দের সঙ্গে শুনবে। তারা বই নিবে, পড়বে, বইয়ে থাকা রঙিন ছবি দেখবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি তাদের গল্পের বই, ছবির বই আগ্রহ বিকশিত হবে পড়ার প্রতি। সরকার কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাদানে আরও সংস্কার করা প্রয়োজন। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিশু শিক্ষার পরিবেশ তৈরি এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। প্রতিটি বিদ্যালয় শিশুর আনন্দঘন খেলার ঘর হোক, ভীতির জায়গা দূর করে ভালোবাসা জন্ম দিতে হবে। শিশুরা যত বিদ্যালয়মুখী হবে তত আমাদের আগামীর প্রজন্মের উন্নয়নের সম্ভাবনা আশানুরূপ হবে এবং ভবিষ্যৎ জাতি তত উন্নত হবে। আরিফ আনজুম : শিক্ষার্থী, বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজ