বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
স্মরণীয়-বরণীয়

মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী

  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী

মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, যিনি জেনারেল এম এ জি ওসমানী নামে অধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সর্বাধিনায়ক। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধানও ছিলেন। তার জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে। পৈত্রিক বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার (বর্তমান ওসমানী নগর উপজেলা) দয়ামীরে। তার পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান এবং মাতা জোবেদা খাতুন। ওসমানীর জন্মের প্রাক্কালে ১৯১৮ সালে খান বাহাদুর মফিজুর রহমান তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ সদর মহকুমায় সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের বসবাস ছিল সুনামগঞ্জ সদরেই। পিতার চাকরির সূত্রে মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই কিছুদিন পর বদলির আদেশ নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে চলে যেতে হয় গোহাটিতে। আর সেখানেই ওসমানীর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয়। ১৯২৩ সালে 'কটনস্‌ স্কুল অব আসাম'-এ ভর্তি হন। লেখাপড়ায় তিনি খুবই মনোযোগী ছিলেন, তার প্রমাণ হলো স্কুলের প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন। ১৯৩২ সালে ওসমানী সিলেট গভর্নমেন্ট পাইলট হাই স্কুল এ ভর্তি হন। তৎকালীন সময়ে সিলেটের এই স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে। সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এম এ জি ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩৮ সালে তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ওসমানী তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দেরাদুনে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সার্ভিস কোরের একটি ব্যাটেলিয়নে তিনি বার্মা (মিয়ানমার) সেক্টরে কাজ করেন। ১৯৪২ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ সালে ওসমানী ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে বিশেষ পরীক্ষা দিয়ে নিয়মিত কমিশন লাভ করেন। সে বছর তিনি ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল সার্ভিসের জন্যও মনোনীত হন। কিন্তু তিনি সামরিক বাহিনীতেই থেকে যান। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এ সময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ১৯৪৯ সালে তিনি চিফ অব জেনারেল স্টাফের ডেপুটি হন। ১৯৫১ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ববাংলার আরও কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সঙ্গে পালন করেন। ১৯৬৬ সালের মে মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরকালীন ছুটি নেন এবং পরের বছর কর্নেল পদবিতে অবসর গ্রহণ করেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন থাকাকালীন ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রম্নয়ারি এম এ জি ওসমানী মৃতু্যবরণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে