বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

মানবসম্পদ উন্নয়নে কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা জরুরি

বেকারত্ব মোচনে আত্ম কর্মসংস্থান কর্মসূচি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মকর্ম সংস্থানের প্রসার ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি সাধারণভাবে তরুণদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেলে তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিরই সহায়ক হবে। তবে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিই কেবল বড় কথা নয়। এর পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার মানের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি শিক্ষার চাহিদা মিটাতে সরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
ড. ফোরকান আলী
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মানবসম্পদ উন্নয়নে কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা জরুরি

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান একটি দেশ। এ দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নকর্ম মূলত কৃষিভিত্তিক। তাই কৃষিশিক্ষা গ্রহণ ও দক্ষতা অর্জন হচ্ছে কৃষি উন্নয়নের মূল হাতিয়ার। কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির মেরুদন্ড। 'জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের ন্যায়। কৃষি হলো তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে তা সমস্ত গাছটিকে ধ্বংস করে দেয়।' চীনা এ প্রবাদটি কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি সুষ্ঠু কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলি যথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার উপাদানগুলো জোগান দেয়। কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। আমাদের দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কারিগরি কৃষিশিক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির সার্বিক প্রয়োগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯২ শতাংশ লোকই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আত্মকর্ম সংস্থানের জন্য কৃষিশিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য। এ গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৪ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে কৃষি শিক্ষাকে একটি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালের এসএসসি পরক্ষার্থীরা আবশ্যিক হিসেবে কৃষিশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ১৯৯৭ সাল থেকে যুগোপযোগী এই কর্মমুখী ও আত্মকর্ম সংস্থানমূলক বিষয় কৃষিশিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তরে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন কারণে অনেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকলেও কৃষিশিক্ষা লাভ করতে পারছে না। ফলে, তারা যুগোপযোগী কর্মমুখী এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দেশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি ও কারিগরিশিক্ষা বাধ্যতামূলকক করা প্রয়োজন।

পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজার ৯৬০টি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০ হাজার ২৭৬টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ৭৫ লাখ ১০ হাজার ২১৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪০ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৪ জন ছাত্রী। যা মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থীর ৫৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে বাংলাদেশের মেয়েদের উপস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে জানান ব্যানবেইস পরিচালক। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৪ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৪৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অনুতাপের বিষয়, ছাত্রছাত্রীর শতকরা ৫৩ ভাগ মাধ্যমিক স্তরেই ঝরে যায়। যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদের মধ্যে মাত্র ৪০ ভাগ ছেলেমেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু এই হার ক্রমান্বয়ে আরও কমছে। মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের পর যাদের পক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয় তারা অন্তত মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে আত্মকর্ম সংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড হচ্ছে কৃষি। মাঠ ফসল ছাড়াও কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৎস্য, পশুপাখি ও বনজসম্পদ। কৃষির এসব শাখা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশে ৫৭ মিলিয়ন গবাদি পশু, ১৩৭ মিলিয়ন হাঁস-মুরগি এবং স্থলভাগের মধ্যে ২২ লাখ হেক্টর জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে ৬৯ দশমিক ৮৮ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা- যা গত ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ টন। যার মধ্যে ১২ লাখ টন অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে এবং বাকি ৬ লাখ টন সামুদ্রিক এলাকা থেকে। পশুপাখি থেকে আমরা মাংস, দুধ ও ডিম পাই। যা আমাদের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এ সময়ে জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল ৫ শতাংশ এবং রপ্তানি আয়ে ১২ শতাংশ।

বন পরিবেশতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বনজসম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। কৃষিজ বনায়নের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করা সম্ভব। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫ শতাংশ বন থেকে আসে। কৃষির উপর্যুক্ত শাখাগুলোর দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্যও কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা আবশ্যক। কৃষিশিক্ষা প্রসার ঘটলে সব স্তরের মানুষ কৃষি সম্বন্ধে জানবে। মানুষ কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন হলে চাষের প্রয়োজনীয়তা বুঝবে। এ সম্পর্কে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এতে মানুষের মধ্যে চাষাবাদ ও কারিগরি কাজের উৎসাহ জাগবে। এই উৎসাহ তাদের কৃষির বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান খুঁজে বের করত সাহায্য করবে। আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করতেও প্রেরণা জোগাবে। কারিগরি ও কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত এসব লোকজন স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। শিক্ষা কাঠামোর মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার ওপর আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। তাছাড়াও দেশের বৃহত্তর কৃষক জনগোষ্ঠীকে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষা প্রদানের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ শিক্ষা কার্যক্রম সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর'র পরিচালনা করতে পারে। এতে দেশের দরিদ্রতা দূর করে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।

এছাড়া, ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি তরুণ সমাজের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সরকারি চাকরির অপ্রতুলতার কারণে আত্মকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার প্রত্যাশায় তরুণদের অনেকেই কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওয়েলডিং, ইলেকট্রিকের কাজ, সেলাই ও কনফেকশনারি ব্যবসার প্রতিও শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা আগ্রহী হয়ে উঠছে। এদিকে, মেয়েরা স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে ঘরেই ছোট ছোট শিল্প গড়ে তুলছে। এসবই উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার। বেকারত্ব মোচনে আত্ম কর্মসংস্থান কর্মসূচি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আত্মকর্ম সংস্থানের প্রসার ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি সাধারণভাবে তরুণদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেলে তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিরই সহায়ক হবে। তবে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিই কেবল বড় কথা নয়। এর পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার মানের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি শিক্ষার চাহিদা মিটাতে সরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। তবে সেগুলো যাতে উপযুক্ত মান রক্ষা করে পরিচালিত হয় সে ব্যবস্থাও অবশ্যক। এক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের সংকট মোচনের লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার বাঞ্ছনীয়। কারিগরি শিক্ষার সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে এ ব্যাপারে সমন্বিত ব্যবস্থাও নিতে হবে। এই লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত হওয়া দরকার। বর্তমানে দেশে যে কারিগরি শিক্ষার চাহিদা ও প্রয়োজন রয়েছে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকারি উদ্যোগে যেমন আরও প্রশিক্ষণ কোর্স ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালুর প্রয়োজন। তেমনি উপযুক্তমানের প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্যাপকভিত্তিক সরকারি সহায়তারও দরকার। তরুণদের মধ্যে হতাশা মোচনেও কাগিররি শিক্ষা যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে। যে দেশে ও সমাজে কর্মসংস্থানের অভাব এবং একটি বড় সমস্যা। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিপুল সে দেশে কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে আত্মকর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা যে কত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকার প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারের আরও ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বর্তমান গেস্নাবালাইজেশনের যুগে উন্নত, আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে ব্যাখ্যা করা অবান্তর। জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং যোগ্যতা ও দক্ষতাই যেখানে উন্নতি ও সাফল্য অর্জনের ভিত্তি। সেখানে উন্নত প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কারণ কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। কেননা, বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। আর এই শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়তে হলে প্রয়োজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ, দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও দক্ষ টেকনিশিয়ান। আমরা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপান ও জার্মানির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, তারা আমাদের ১০ ভাগের এক ভাগ বিদেশি ঋণ নিয়ে আজকের বিশ্ব অর্থনীতিকে শাসন করছে। সেইদিন তারা উপলব্ধি করেছিল তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দাঁড় করাতে হলে সর্ব প্রথম প্রয়োজন শিল্পকারখানা, কৃষিখামার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্রম্নত আধুনিকীকরণ। এই উপলব্ধি থেকে তারা সব প্রযুক্তিবিদ্যায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে। সেখানে কারিগরি শিক্ষার হার ৫৬ শতাংশ এবং বর্তমানে তারা কারিগরি শিক্ষার হার ৭০ শতাংশ- এ উন্নতি করার জন্য আন্দোলন করছে। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর অল্প সময়ে যে বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছে। তার মূলে রয়েছে তাদের শিল্পনির্ভর অর্থনীতি। আর শিল্পনির্ভর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা।

অথচ আমাদের দেশে মাত্র ৮ শতাংশ-১০ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০ শতাংশ লোক কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত। সুতরাং, দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণের স্বার্থে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করেন না। তারা তাদের সবচেয়ে কম মেধাবী সন্তানটিকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করাতে চান। এখনো গ্রামেগঞ্জে ভোকেশনালের কথা শুনলে মানুষ নাক সিটকায়। এসএসসি (ভোক) বর্তমানে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ-এর শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। এখানে জেনারেল শিক্ষার মতো পদার্থ, রসায়ন, ইংরেজি, বাংলা, গণিত, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের সমন্বয় রয়েছে। পাশাপাশি একটি করে টেকনিক্যাল সাবজেক্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে, ভোকেশনালের একজন ছাত্র এখন বুয়েট ও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ পাচ্ছে। আর যারা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না তারা বিদেশে গিয়েও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং, ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান আপনারা কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিরূপ ধারণা ত্যাগ করুন। সরকারের প্রতি আহ্বান কারিগরি শিক্ষাকে বেগবান করুন, দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করুন। সবচেয়ে বড় কথা দেশে দক্ষ লোক সৃষ্টি করতে হলে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি যথাযথ নজর দিতে হবে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, সরকার কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তাহলে দেশের বৃহৎ বেকার যুবশক্তি কর্মের হাতিয়ারে পরিণত হবে।

ড. ফোরকান আলী : গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে