সূচকে দুই ধাপ পেছাল বাংলাদেশ দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্নীতি একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের পথে অন্তরায়। ফলে, দুর্নীতি রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। সম্প্রতি জানা গেল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে গত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আর এতে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে দুই ধাপ। দুর্নীতির এই ধারণা সূচকের (সিপিআই) ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৫১ নম্বরে। গতবার এ তালিকায় বাংলাদেশ ১৪৯ নম্বরে ছিল। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত 'দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৪' এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে এ তথ্য জানা গেছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি পরিস্থিতির অবনতিকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। যেসব তথ্য উঠে আসছে তা খতিয়ে দেখে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রসঙ্গত, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০ থেকে ১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। '০' স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং '১০০' স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। তথ্য মতে, ২০২৩ সালে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪, গত বছর পেয়েছে ২৩। এর অর্থ হলো, দুর্নীতি বাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এক কমেছে। কিন্তু অন্য দেশ আরও খারাপ করায় সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে ডেনমার্কে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মাত্রা ছিল দক্ষিণ সুদানে। আমরা মনে করি, দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে, আমাদের দেশ থেকে যেসব দেশে টাকা পাচার হচ্ছে, তাদের স্কোর আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক বলছেন, বাংলাদেশ দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ 'হারাতে বসেছে'। এছাড়া, সূচকে শুধু কর্তৃত্ববাদীর মেয়াদ বলা যাবে না, এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও কিছুটা মেয়াদ চলে এসেছে। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পরও দেশে 'চাঁদাবাজি, দখলবাজি' চলছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেছেন- ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে, চেয়ারের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চলাচলের পরিবর্তন হয়নি। ফলে, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দুর্নীতি রোধে কঠোর হতে হবে। দুদক সংস্কারে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশের স্কোর বাড়ার সম্ভাবনা আছে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। যদিও সেটা নির্ভর করবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু কার্যকর এবং রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন কতটুকু হবে তার ওপর। মনে রাখা দরকার, এর আগে বাংলাদেশ দুর্নীতির জন্য বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফলে, দুর্নীতি সংক্রান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দুর্নীতি নির্মূলে কঠোর হতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সংশ্লিষ্টদের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, দুর্নীতি কেন হয়, কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে এবারই বাংলাদেশের স্কোর সবচেয়ে কম। অর্থাৎ, দুর্নীতি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এক যুগের মধ্যে এখনই সবচেয়ে খারাপ। এই সময়ের মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, এরপর প্রতি বছর স্কোর কমেছে ১ পয়েন্ট করে। ২০১৭ সালের ২৮ ছিল এই সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। সর্বোপরি, দুর্নীতি নির্মূল করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। দুর্নীতি নির্মূল করে বাংলাদেশকে সাফল্যের ধারায় এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।