মাথাপিছু আয় কমে যাওয়া, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো সুখকর নয়। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, দীর্ঘদিন বাড়িয়ে দেখানোর পর দেশের পণ্য রপ্তানি আয় সংশোধন করা হয় গত বছরের এপ্রিলে। সংশোধনীতে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে ১৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, এত বড় অঙ্কের অর্থ কমে যাওয়ার প্রভাব মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাবে, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় কমে হয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার।
স্মর্তব্য, মাথাপিছু আয় হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের নাগরিকদের গড় আয়। বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাব বলছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় সাময়িক হিসাবের চেয়ে ৪৬ ডলার কম। সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। বিবিএসের প্রতিবেদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে।
প্রবৃদ্ধির এমন পতনের পেছনে দেশের ব্যাংক খাতে লুটপাট, অব্যাহত অর্থপাচার, রপ্তানি আয়ের সংশোধিত হিসাবসহ বেশ কিছু কারণ দায়ী বলে জানা যায়। ফলে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি পতনের পেছনের কারণগুলো আমলে নিতে হবে। জিডিপি ও রপ্তানির সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাখ্যায় বিবিএস বলেছে, জিডিপির হিসাব প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। এ বিবেচনা থেকে গত অর্থবছরের সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করা হয়। তবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানির সংশোধিত হিসাব সাময়িক প্রাক্কলিত হিসাবের তুলনায় ২১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কম হয়েছে। ফলে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এছাড়া, যেসব কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্লথ হতে শুরু করে সেসব কারণ বিবেচনায় রেখে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না।
সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের বিষয় বিবেচনায় রেখে উদ্যোগী হতে হবে। এর আগে মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্লেষকদের এমন মত উঠে এসেছিল, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেননা, ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। ফলে, এই দিকটি এড়ানো যাবে না। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে যেমন কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। তেমনি বৈষম্য দূর না হলে সুফল আসবে না। সামাজিক বৈষম্যের দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে নানা সংকট আরও তীব্র হতে পারে, এমন সতকর্তাও রয়েছে বিশ্লেষকদের। দারিদ্র্য কমলেও ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়তে থাকলে সেটাও উদ্বেগের বিষয়। ফলে, সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জরুরি।
সর্বোপরি, প্রবৃদ্ধি কমেছে, কমেছে মাথাপিছু আয়ও- এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে, এমন বিষয় এর আগে আলোচনায় এসেছে- যা এড়ানো যাবে না। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয় কমে যাওযার বিষয়কে সামনে রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।