স্মরণীয়-বরণীয়

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১২ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৪৩-৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭) ছিলেন বাংলাদেশি ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক। তিনি একজন স্বল্পপ্রজ লেখক ছিলেন। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ণ কৌতুকবোধ তার রচনাকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী সুষমা। তাকে সমাজ বাস্তবতার অনন্যসাধারণ রূপকার বলা হয়। তার রচনাশৈলী স্বকীয় ও সংলাপে কথ্যভাষার ব্যবহার বাংলা কথাশিল্পে অনন্যসাধারণ। আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের গটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম মঞ্জু। ১৯৪৬ সালের দিকে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৪৯ সালে ঢাকার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে তিনি কে এল জুবিলি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। তারপর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তিতে ঢাকা ছেড়ে সপরিবারে বগুড়ায় স্থানান্তরের ফলে সেখানে তিনি ১৯৫২ সালে বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ইলিয়াস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে বাংলায় স্নাতক ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি স্বাক্ষর সামের একটি কবিতাপত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ ও আসাদ মান্নান তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন অন্য ঘরে অন্য স্বর প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে, যেটির জন্য তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় ও সর্বশেষ উপন্যাস খোয়াবনামা বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তার পাঁচটি ছোটগল্প সংকলন আর একটি প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। জীবদ্দশায় সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও আনন্দ পুরস্কার এবং মরণোত্তর একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার রচনা একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে, সৃষ্টিকর্মের অভিযোজনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন ও মঞ্চনাটক। কর্মজীবন শুরু করেন করটিয়া সা'দত কলেজে। যদিও কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তা ছেড়ে দেন। এরপর জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে সহকারী আধ্যাপক এবং ১৯৮৪ সালে সহযোগী আধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি হয়। তিনি ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যাপনা করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ, মফিজউদ্দীন শিক্ষা কমিশনের বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা কলেজের বাংলার অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ইলিয়াসের ক্যানসার ধরা পড়ে। রোগটি দেরিতে ধরা পড়ার কারণে তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। ওই বছরেরই ২০ মার্চ তার ক্যানসার আক্রান্ত ডান একটি পা পুরোপুরিভাবে কেটে বাদ দিতে হয়। কিছুদিন ভুগে অবশেষে ক্যানসারজনিত কারণেই তিনি ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেন।