বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূষণের হার। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরও বায়ুদূষণের কবলে। দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা, একইসঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ুদূষণ ঘটে যখন বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকারক পদার্থগুলো মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে, বায়ু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, এটি অন্যান্য উপাদানের তুলনায় দ্রম্নত এবং ব্যাপকভাবে দূষণ ছড়াতে পারে।
নুসরাত সুলতানা
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

বর্তমান বিশ্বে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে বায়ুদূষণ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূষণের হার। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরও বায়ুদূষণের কবলে। দিন দিন বাড়ছে দূষণের মাত্রা, একইসঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ুদূষণ ঘটে যখন বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকারক পদার্থগুলো মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে, বায়ু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, এটি অন্যান্য উপাদানের তুলনায় দ্রম্নত এবং ব্যাপকভাবে দূষণ ছড়াতে পারে। ফলস্বরূপ, বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে গুরুতর পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বব্যাপী, ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। প্রতি বছর, প্রায় ৭ মিলিয়ন মৃতু্য বায়ুদূষণের জন্য দায়ী করা হয়। তাই এই জটিল সমস্যাটি সমাধান করার জরুরি প্রয়োজনকে তুলে ধরে।

ঢাকার বায়ুদূষণ বিগত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় প্রতিদিনই, শুষ্ক মৌসুমে বায়ুর গুণমান আগের মাত্রার চেয়ে খারাপ হওয়ার কারণে শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত হয়। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান নির্ধারক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এলাকার তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত এই সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে গত বছর ডিসেম্বর থেকে ঢাকা দূষিত বায়ুর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ফেব্রম্নয়ারিতে বায়ুর মানের সূচক (একিউআই) ২০০ উপরে, অর্থাৎ বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ সূচকের তালিকা প্রদানকারী সংস্থা বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি যথাযথ পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনকে তুলে ধরে এবং সতর্কতা হিসেবে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে।

ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য কারণ হলো- শহরের চারপাশে গড়ে ওঠা ম্যারি ইটের ভাটা, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, এবং সূক্ষ্ণ কণা পদার্থ-এর মতো ক্ষতিকারক দূষণকারী। উপরন্তু, অকটেন এবং ডিজেল ব্যবহার করে পুরানো এবং অযোগ্য গাড়িগুলোর দ্বারা নির্গত ঘন কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণে উলেস্নখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। এছাড়াও বায়ুদূষণ আরও বৃদ্ধি করছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শহরে চলমান বিভিন্ন নির্মাণকাজ, ট্যানারি শিল্প, কলকারখানার ধোঁয়া। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবর্জনা পোড়ানো, অযোগ্য যানবাহন থেকে নির্গমন, ইটভাটা থেকে দূষিত পদার্থ এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ এখনো অপর্যাপ্ত।

শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই বায়ুদূষণের ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাঁপানি, এলার্জি সমস্যা, নিউমোনিয়া, শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ও ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ানোসহ নানা রোগের সৃষ্টি করে। দেশে বায়ুদূষণের কারণে বছরে ১০ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়। দেশে মোট মৃতু্যর প্রায় ২০ শতাংশ মৃতু্য হয় বায়ুদূষণের কারণে। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানো ছাড়াও বায়ুদূষণের ফলে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কৃষিতে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস করছে। বায়ুদূষণ রোধে তাই অতি দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে ৭৫০ কেজি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিশ্চিতে তাই বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্মাণকাজে দূষণের হার কমাতে হবে। গাড়ি, কলকারখানা, ইটের ভাটা থেকে কালো ধোঁয়া যাতে বায়ুকে দূষিত করতে না পারে তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেমন বৈদু্যতিক যানবাহনের ব্যবহার, কলকারখানায় ফিল্টারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা। পস্নাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস করা। বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং অপচনশীল বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়। দূষণের ক্ষতির প্রভাব কমাতে বাইরে বের হওয়ার সময় মাক্স ব্যবহার করা। বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিতে সরকারের নীতি নির্ধারণ করতে হবে এবং কঠোরভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা পারে বায়ুদূষণের হার হ্রাস করতে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে এখনই সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার।

নুসরাত সুলতানা : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে