একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির প্রশ্নে জনজীবনের স্বাভাবিকতা জরুরি। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পার হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। মূল্যস্ফীতি আগের মাসগুলোর তুলনায় কিছুটা কমেছে, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে। অন্যদিকে বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি, চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়োগসহ সরকারি চাকরিজীবীদের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। জানা যায়, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ছাড়া সবকিছুতেই অস্বস্তি। ফলে, সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে। অস্বস্তি দূরীকরণে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া অভু্যত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো এবং সরকার জাতীয় ঐকমত্যের কথা বললেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। সরকারের কাজে গতিহীনতার জন্য একাধিক উপদেষ্টাসহ অনেকেই দায়ী করছেন জনপ্রশাসনের স্থবিরতাকে। ফলে, এই স্থবিরতা কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। গত ছয় মাসে অন্তত দেড়শ' আন্দোলন হয়েছে। জুলাই গণহত্যা ও আওয়ামী লীগ শাসনামলের অনিয়মের বিচারের গতি ধীর বলে অভিযোগ অভু্যত্থানের অংশীজনের। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, সংস্কারের গতিও ধীর। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং যেসব বিষয়ে অস্বস্তি আছে তা মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
তথ্য মতে, ছয় মাসেও পুলিশর্-যাবের কার্যক্রমে আশানুরূপ গতি আসেনি। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ছাড়াও গত ছয় মাসে 'মব জাস্টিস' নিয়ে উদ্বেগ উঠে আসছে। অগ্নিকান্ড, ভাঙচুরসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ নানারকম অপরাধে জড়িত অনেকে জামিনে মুক্ত হয়। কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা আবারও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯৪৭ জন খুন হয়েছে। এই সময়কালে ২৪৩টি ডাকাতি ও ৫৫৩টি দসু্যতার মামলাও হয়েছে। আর চুরির ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৪৮৪টি। এই বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
সুখকর হলো, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে মোট ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য- যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। যদিও মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, বাজেট বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায়, বেসরকারি বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার ও বিদেশি বিনিয়োগের অবনতি হয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যালোচনা অনুযায়ী, পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের কাছ থেকে ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সর্বোপরি, জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে হবে। অস্থিরতা ও অস্বস্তি দূর করতে হবে। এগুলো দেশের সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে স্বস্তির পাশাপাশি সবকিছুতে যে অস্বস্তির খবর আসছে তা এড়ানো যাবে না। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রম্নত জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোসহ দেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।