বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। আর এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। তাই যখন কোনো দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ বলে জানা যায়, তখন তা ইতিবাচক।
সম্প্রতি খবরে প্রকাশ- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এছাড়া, কর্মদক্ষতা, অধিক শ্রম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে দেশটির শ্রমবাজারে শীর্ষ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশি কর্মীরা। দেশটির শ্রমবাজারে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী কর্মরত রয়েছে। ফলে, এই বিষয়টি সামগ্রিকভাবে আশাব্যঞ্জক। তথ্য মতে, বর্তমানে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭০ জন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়াতে বৈধভাবে কর্মরত আছেন, সংখ্যার বিচারে যা সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, সবশেষ কলিং ভিসায় নানা অনিয়ম আর অভিযোগের মধ্যেও ৪ লাখ ৭৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নির্মাণ খাতে। আর একই সময়ে মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নামমাত্র জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরেছেন লক্ষাধিক কর্মী। অন্যদিকে, এটা বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীর মোট সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। তবে এবার সঠিক একটি সংখ্যার হিসাব পাওয়া গেছে মানবসম্পদমন্ত্রীর বক্তব্যে। এই তথ্য আমলে নিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের মালয়েশিয়ায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে কাজ করতে হবে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে কর্মী দক্ষতা বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী তৈরি করা গেলে নতুন নতুন শ্রমবাজারের দ্বার যেমন উন্মোচিত হবে, তেমনি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে তা দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান টেকসই করতে দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
বলা দরকার, নানা সময়ে প্রবাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে সেগুলোও এড়ানো যাবে না। এছাড়া, মানবপাচার চক্র অবৈধ পথে বিদেশ গমনের জন্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। অনেককে সর্বস্বান্ত করেছেন। অবৈধ পথে বিদেশ গমনে প্রাণহানির ঘটনাসহ নানা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয়গুলো নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রচার চারণা চালাতে হবে- যেন দালালদের খপ্পরে তারা না পড়ে। জনশক্তি রপ্তানি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির দিকে যত বেশি মনোযোগ দেওয়া যাবে, ততই বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
সর্বোপরি, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে কী ধরনের সংকট বা প্রতিবন্ধকতা আছে তার সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর তা সম্ভব হবে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মধ্য দিয়ে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।