মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার ভয়াবহতা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে দুর্ঘটনার কারণে। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র কতটা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা স্পষ্ট। আরও উদ্বেগজনক হলো, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে! এই ভয়াবহতা নিয়ে বারবার বলা হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না! লেখালেখি হচ্ছে, সভা-সেমিনার হচ্ছে, নানা ধরনের ত্রম্নটি-বিচু্যতি তুলে ধরা হচ্ছে। তবুও মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা থেমে নেই। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত শঙ্কাজনক। যা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না।
তথ্য মতে, শুধু জানুয়ারি মাসেই ২৭১ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬৪ জন। এক্ষেত্রে লক্ষ্য করা দরকার, এই তথ্য মোট নিহতের ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। জানা যায়, জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৯ দশমিক ৬১ জন। দেশব্যাপী ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। আর অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশই পরিবারের অভিভাবক, যাদের ওপর স্ত্রী-সন্তানসহ অনেকেই নির্ভরশীল। একজন অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে ওই পরিবারের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়।
উলেস্নখিত তথ্যগুলো আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষে সজাগ হওয়া জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে কঠোর হতে হবে। কেননা, সড়ক যদি মৃতু্যর ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায় তবে তার ভয়াবহতা বর্ণনাতীত। প্রতিনিয়ত সড়কে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। মিটিং-মিছিল, নানা দাবি তুলে ধরা হচ্ছে। প্রতিবাদ হচ্ছে। তবু কেন সড়কে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে? এই প্রশ্ন এড়ানোর সুযোগ নেই। সড়ক নিরাপদ করতে প্রতিবন্ধকতা কোথায়, সংকট কী- এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করে যত দ্রম্নত সম্ভব সড়ক নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে উঠে আসা দুর্ঘটনার কারণ সংক্রান্ত তথ্য আমলে নিলে স্পষ্ট হয়- ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলোর কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাই এই কারণগুলোকে আমলে নিয়ে কীভাবে সড়ক নিরাপদ করা যায়, দুর্ঘটনা কমানো যায়; সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ক্রমাগত সড়কে প্রাণ ঝরবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যদিকে, এমন অভিযোগ আছে- অনিয়ন্ত্রিতভাবে সারাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে মোটর সাইকেল। সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মোটর সাইকেল চালকরা। যেখানে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন অনেকেই। আর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি কতটা ভীতিকর এবং পরিতাপের সেটা ভাবতে হবে।
সর্বোপরি, দুর্ঘটনার চিত্র আমলে নিতে হবে। তেমনি এড়ানো যাবে না, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। ফলে, সড়কের ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সড়ক নিরাপদ করতে সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।