নিত্যপণ্যের সংকট, দাম বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। সম্প্র্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হওয়ার পরও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে এই নিত্যপণ্যের। এমনকি ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না ভোজ্যতেল। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তারা খুচরা বাজারে হন্যে হয়ে খুঁজেও চাহিদামতো তেল কিনতে পারছেন না। সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
তথ্য মতে, কিছু জায়গায় ভোজ্যতেল মিললেও প্রতি লিটারে বাড়তি ১৫ থেকে ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এছাড়া, কিছুদিন আগেও বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় পাওয়া যেত। একই তেল কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। স্থানীয় দোকানে দাম পড়ছে প্রায় ২০০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তারা দিশাহারা। অন্যদিকে, ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে থাকা এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বেশি। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল সরবরাহ না করার অভিযোগ বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (ক্যাব) সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রমজানকে টার্গেট করে অসাধু ব্যবসায়ী, করপোরেট, শিল্প গ্রম্নপ ও মিল মালিকরা কারসাজি করে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও করছেন।
আমরা মনে করি, অভিযোগ এবং সৃষ্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগেও দেখা গেছে, রমজানের আগে অসাধু ব্যবসায়ী, বাজার সিন্ডিকেটধারীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। ক্রেতাদের জিম্মি করা, দাম বৃদ্ধির জন্য কারসাজিসহ নানা অভিযোগও বিদ্যমান। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ক্রেতাদের যেন জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তথ্য মতে, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। তখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা- যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা- যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
উলেস্নখ্য, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত এবং বাজার সংস্কৃতিরই অংশ। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে, তা আর কখনোই আগের দামে ফিরে যায় না এমন কথাও প্রচলিত। অথচ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে জনসাধারণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রথমে করোনা এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এখন যখন জানা যাচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হওয়ার পরও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে এই নিত্যপণ্যের; তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। জানা যায়, হঠাৎ করেই বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ না থাকার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এ কারণে দামও বেড়েছে। ফলে, এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।
সর্বোপরি, পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার সম্পর্ক নাকি এটা হচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীদের হীনমানসিকতা সেই দিকটি আমলে নিতে হবে। অতীতে দেখা গেছে একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কেটেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সামনে এসেছে নানা অজুহাত। ফলে, দেশে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল আমদানি হওয়ার পরও কেন বাজারে সংকট- সেটি খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।