অনিরাপদ খাদ্য কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেহে পুষ্টির সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য। অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে শিশু, গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে দেশে দৈনিক ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ মারা যান। এই তথ্যগুলো কতটা উদ্বেগের সেটা অনুধাবন করতে হবে এবং সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে হবে। উলেস্নখ্য, রোববার জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান দিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন। এই সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। তাই বিপুল জনসংখ্যার সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বছরে ৩৫ হাজার মানুষের মৃতু্য, পুষ্টিহীনতা, নানারকম ঝুঁকির বিষয়গুলো সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে, বিজ্ঞজনদের আলোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা খতিয়ে দেখে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রসঙ্গত, শুধু দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে অনিরাপদ খাদ্য ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে প্রতি বছর প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৪ কোটি মানুষ। আর অসুস্থ হয়ে পড়ে ৬০ কোটি এমন তথ্যও এর আগে জানা গেছে। ব্যাকটেরিয়া, কেমিক্যাল, কাঁচের টুকরা ইত্যাদির কারণে খাদ্য অনিরাপদ হয়। তাছাড়া পানিবাহিত ভাইরাস, বিষাক্ত পদার্থের কারণেও খাদ্য অনিরাপদ হয়। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃতু্য হয়। এসব তথ্য রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। সে কারণেই খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। জনসাধারণকেও সচেতন করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা জরুরি। খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্যে দেখা যায়, খাবারে অনেক ভেজাল রয়েছে। ঘি'র মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬৭, গুড়ে ৪৩ দশমিক ৭৫, মধুতে ৩৩ দশমিক ৩৩, মিষ্টিতে ২৮ দশমিক ৫৭, হলুদে ২৭ দশমিক ৯৩, ডাল ও ছোলায় ৫, চালে ৮ দশমিক ৩৩, মরিচে ১৪ দশমিক ৬৩, গুঁড়া দুধে ১৬ দশমিক ৬৭ এবং লবণে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভেজাল রয়েছে। এগুলো উদ্বেগজনক। খাদ্য নিরাপদ রাখতে হলে খাবার পরিষ্কার রাখা, রান্না ও কাঁচাখাবার একসঙ্গে না রাখা, রান্নার সময় ঢাকনা দেওয়া, খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রাখা এবং রান্নায় নিরাপদ পানি ব্যবহার করার মতো সচেতনতা তৈরি করা খুবই জরুরি। সর্বোপরি, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে টানা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল না মিশিয়ে খাদ্য সঠিকভাবে যেন প্রস্তুত হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অনিরাপদ ও ভেজাল খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এই ঝুঁকি রোধ না হলে জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিও দুর্বল হবে। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।