বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
কাউকে বিনা বিচারে হত্যার সুযোগ নেই। এর আগে, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে বিভিন্ন সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কুমিলস্নায় যৌথ বাহিনীর হেফাজতে যুবদল কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নানারকম প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকান্ডকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। জুলাই অভু্যত্থান এবং এত রক্তক্ষরণের পরও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনা কেন ঘটল তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
জানা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে কুমিলস্নায় যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃতু্যর ঘটনার দ্রম্নত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে সরকারের এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার ও মৃতু্যর সঠিক কারণ উদ্ঘাটনে একটি 'উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি' গঠন করো হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আমরা মনে করি, যত দ্রম্নত সম্ভব এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কতটা ভয়াবহ এবং আশঙ্কাজনক তা এর আগে বার বার আলোচনায় এসেছে। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, 'ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক। এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়।'
তথ্য মতে, মৃত তৌহিদুল ইসলাম কুমিলস্না সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ তার পরিবারকে ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রথমে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তৌহিদুল ইসলামের ভাই সাদেকুর রহমান বলেছেন, কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত এমনভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে যে কালো ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। পেট, বুক, পিঠ, পা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে শুধুই নির্যাতনের চিহ্ন।
মনে রাখা দরকার, যে কেউ দোষ করলে তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বিনা বিচারে হত্যার ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে জানা গিয়েছিল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে 'বন্দুকযুদ্ধ' বা 'ক্রসফায়ারের' নামে অন্তত ১ হাজার ৯২৬ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার এই হিসাব বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের। এখন যখন আবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা সামনে আসছে তখন, এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড রোধে কঠোর হতে হবে।
সর্বোপরি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হলো এমন এক ধরনের হত্যা- যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে পাশকাটিয়ে সংঘটিত হয়। এবারের ঘটনাটি আমলে নিয়ে দ্রম্নত সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।