জিতেন ঘোষ (১৯০১ - ৩ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৭৬) ছিলেন একজন সশস্ত্র বিপস্নববাদী, কমিউনিস্ট নেতা, লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা। তার জন্ম কুমারভোগ, মুন্সীগঞ্জে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই পুলিশ তাকে বিপস্নবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ভেবে আটক করে। ১৯২০ সালে আইএ পাস করে বিএ'তে ভর্তি হন; তারপরই ১৯২১-এর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। ফলত, তাকে কারাবরণ করতে হয়। মাদারীপুর জেলে থাকার সময় বাঘা যতীনের সহকর্মী বিপস্নবী পূর্ণ দাসের সঙ্গে আলাপ হয়। এ সময় মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা পত্র পড়ার সুযোগ হয় তার। ১৯২৩ খৃষ্টাব্দে ছাড়া পেয়ে পিকেটিং করার অপরাধে আবার গ্রেপ্তার হন। এ সময়ে হুগলী জেলে বিপস্নবী যতীন্দ্র নাথ দাস ছিলেন তার সঙ্গী। জেলের কঠোর আইন ও অত্যাচারের প্রতিবাদে অনশনও করেন জিতেন ঘোষ। ক্রমাগত গ্রেপ্তারি আর ব্রিটিশ পুলিশের হাত এড়াতে গা ঢাকা দিলেন বর্মায় ১৯২৪ সালে এবং রেলে অ্যাকাউন্টস বিভাগে চাকরিও পান। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুসহ বহু বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ব্রিটিশ সরকার বর্মার জেলে পাঠিয়েছিল, তিনি গোপনে জেল থেকে সুভাষচন্দ্রের চিঠিপত্র, লেখা বাইরে আনার দায়িত্ব নেন। তার বিশেষ প্রচেষ্টায় প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে বিপস্নবী সংগঠন গড়ে ওঠে বর্মায়, পরে মাদ্রাজি ও আরাকানিরাও এর সঙ্গে যোগ দেয়। সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করলে আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। প্রেসিডেন্সি জেলে থাকাকালীন কমিউনিস্ট নেতা ভবানী সেনের সাহচর্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় আগ্রহী হন। ১৯৩৩-এ তাকে দেউলি বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়। আন্দামান বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে যে অনশন হয় তাতে যোগদান করেন। তাকে বহরমপুর জেলে পাঠানো হয় এবং মুক্তি পাওয়ার পরেও সরকার নজরবন্দি রাখার ব্যবস্থা করে স্বগৃহে। বিপস্নবী হরিনারায়ণ ঘোষালের সঙ্গে মিলে বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠক হন ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে। বর্মায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠন গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। সেই বছরই ঢাকায় ফিরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার হন। ১৯৪১ এ কুকুটিয়া গ্রামে কৃষক সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে আবার গ্রেপ্তার হন। বিপস্নবী জিতেন ঘোষ কৃষক আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। হিন্দু-মুসলিম কৃষক নির্বিশেষ যোগদানে তেভাগা সাফল্য লাভ করে। ১৯৪৯-৫০ এ কয়েক মাসব্যাপী ঢাকা ও বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) রাজবন্দিদের মর্যাদার দাবিতে ক্রমাগত যে অনশন হয় তার অন্যতম নেতা ছিলেন জিতেন ঘোষ। জেল খেটেছেন অসংখ্য বার। আজীবন বিপস্নবী জিতেন ঘোষ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা থেকে দুর্ভেদ্য কৃষক প্রধান অঞ্চলে চলে যান বিপস্নবী সংগঠনের কাজে। কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের কর্মীরা তার পরামর্শ নিতেন নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধের কার্যপ্রণালি ঠিক করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও। ৩ ফেব্রম্নয়ারি, ১৯৭৬ কলকাতাতে মোটর দুর্ঘটনায় তিনি মৃতু্যবরণ করেন।