বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার- এমন আলোচনা উঠে আসছে। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) 'বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫ : সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানা যায়। এছাড়া, সরকার খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে এটাও আলোচনায় আসে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পরিকল্পিত পদক্ষেপ জরুরি।

নিত্যপণ্যের দাম না কমলে মানুষ দিশাহারা হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাই সংকট আমলে নিয়ে সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে। এর আগে, এসব অভিযোগও উঠেছে, একেক সময় একেক অজুহাত তুলে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ায়। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ সত্ত্বেও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটে। যা বাজার ব্যবস্থাপনার সমস্যা। ফলে, কালোবাজারি এবং অতিমুনাফা লাভের প্রত্যাশায় জনসাধারণকে জিম্মি করার ঘটনা ঘটছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। উলেস্নখ্য, সিপিডির পর্যবেক্ষণে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুতদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ, পরিবহণ সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ জরুরি।

প্রসঙ্গত, চালের বাজারব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। সে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠপর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করা, বিশেষ করে- মাঝারি পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত দামের যে অস্থিরতা তার মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উলেস্নখযোগ্য আধিপত্য আছে। ফলস্বরূপ ধান চাষিরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চমূল্যের সম্মুখীন হন- যার ফলে, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই দিকগুলো বিবেচনায় নিয়েও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

সর্বোপরি, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে একটি অকার্যকর অর্থনীতি রেখে গেছে- যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঠিক করতে হবে। বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশ্লেষণে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। লক্ষ্য করা দরকার, বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতারও পরিবর্তন হয়নি। অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে এই অভিযোগও নতুন নয়। যা দুর্ভাগ্যজনক। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলাসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে