মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন (৩১ জানুয়ারি, ১৯০৪- ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭) ছিলেন বাংলাদেশি লোকসঙ্গীত, লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ও লোকসাহিত্য বিশারদ। তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জায়দার আলী, মাতার নাম জিউয়ারুন নেসা। ১৯২১ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৬ সালে বিএ পাস করেন। ১৯২৮ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথমশ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডিয়ান ভার্নাকুলার্সে প্রথমশ্রেণিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে তিনি এমএ পাস করেন। তার আগে আর কোনো মুসলিম ছাত্র প্রথম শ্রেণি পায়নি। মাত্র দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি লোকসাহিত্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। লোকসাহিত্য সংগ্রহে মুহম্মদ মনসুর উদ্দিনের আত্মনিবেদন ঘটে প্রবাসী পত্রিকা পাঠে- যা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো এবং পত্রিকাটির ওই সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত লালনের গান ছাপা হয়- যা কিশোর কবি মুহম্মদ মনসুর উদ্দিনকে লালনের গান সংগ্রহে অনুপ্রেরণা জোগায়। পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে। আহমদ শরীফের ভাষায়: নব যৌবনে রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য ও অবনীন্দ্রনাথের আদরপুষ্ট হয়েছিলেন। কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৩১ সালে সরকারি চাকরি দিয়ে, স্কুল সাব- ইনস্পেক্টর রূপে। বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনার পর চাকরি শেষ করেন ১৯৫৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রফেসর হিসেবে। ১৯৫২ সালে সরকারি মাসিক পত্রিকা 'মাহে নও'-এর সম্পাদক ছিলেন ছয় মাসের জন্য। মুহম্মদ মনসুর উদ্দিনের প্রথম সংগ্রহ ছিল নিজ গ্রাম পাবনার মুরারীপুরের প্রেমদাস বৈরাগীর কাছ থেকে সংগৃহীত লালনের একটি গান পাঠিয়ে দেন প্রবাসীতে- যা ছাপা হয় ১৩৩০ সালের আশ্বিন সংখ্যায়। তার মাধ্যমে পাওয়া যায় ত্রয়োদশ খন্ডে হারামণির মতো লোকসঙ্গীতের অমূল্য সংগ্রহ। এছাড়াও তিনি লিখেছেন বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনার মতো তিন খন্ডে বিভক্ত গবেষণাগ্রন্থ। তার রচিত মোট গ্রন্থসংখ্যা ৪২টি। অমূল্য সব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশে-বিদেশে পেয়েছেন অনন্য সব সম্মান, স্বীকৃতি, সংবর্ধনা ও পদক। তার জীবনের শতাব্দীর কয়েক দশক তিনি কাটিয়েছেন রাজধানী ঢাকাতেই।