খাদ্যশস্য মজুতে ঘাটতি সঠিক পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশে চাল ও গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ উলেস্নখযোগ্যভাবে কমে গেছে, একই সঙ্গে কমেছে খাদ্যশস্য আমদানি। ফলে, সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুত কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ধীরগতি এবং আমদানি কমায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতির দ্রম্নত উন্নতি না হলে বাজারে চালের দাম বাড়তে পারে- যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে মজুত ছিল ১১ লাখ ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য। কিন্তু ৩ ডিসেম্বর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯০ হাজার টনে। হিসাব অনুযায়ী, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে গুদামে মজুত কমেছে ৭৭ হাজার টন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টনের বেশি খাদ্য মজুত কমছে। অথচ দৈনিক সংগ্রহ হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৭১৪ টন। বর্তমান মজুতের মধ্যে চাল রয়েছে ৬ দশমিক ৬৯ লাখ টন, গম ৪ দশমিক ২০ লাখ টন এবং ধান মাত্র ১ হাজার টন। অথচ চার মাস আগেও সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল প্রায় ১৮ লাখ টন- যা বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ এ সময়ে সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুত কমেছে ৮ লাখ টন। এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন, চলতি আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান, চাল ও গম সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে ১৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে সরকারি গুদামে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টন- যা দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৭১৪ টন। অথচ দৈনিক সংগ্রহ হওয়ার কথা ১১ হাজার টনের বেশি। এই ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬৬ দশমিক ২৮ লাখ টন খাদ্য আমদানি হয়েছে- যার পুরোটাই গম। তবে চাল আমদানির হার খুব কম। গত অর্থবছরে সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি হয়নি, তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি হয়েছে মাত্র ২২ লাখ ৬২ হাজার ২২০ টন খাদ্য, যা মোট চাহিদার ৩১ শতাংশ। এদিকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৩১০ টন- যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
আমরা মনে করি, বর্তমানে সরকারি মজুত যে পরিমাণে রয়েছে, তা কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। সরকারের উচিত দ্রম্নত আমন সংগ্রহের গতি বাড়ানো। কমপক্ষে ১৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করে মজুত করতে হবে। আমদানির এই ধীরগতির ফলে দেশে খাদ্য মজুতের ঘাটতি হতে পারে, যার প্রভাব বাজারে সরবরাহের চাপ বাড়াবে এবং উচ্চমূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে।
মনে রাখা দরকার, কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। কৃষির ওপর আমাদের অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত সুষ্ঠু উদ্যোগই কেবল পারে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।