ঝুঁকিতে দেশের ফসলি জমি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশের ফসলি জমি ঝুঁকিতে, যেখানে উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিই বড় চ্যালেঞ্জ- এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক- যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার, কীটনাশক ও সংবেদনশীল হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণে ভালো নেই মাটির স্বাস্থ্য। এছাড়া, মাটি হয়ে গেছে বিবর্ণ, অনুর্বর। ফলে, এই বিষয়গুলো যখন সামনে আসছে তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সামগ্রিক বিষয় আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ফলে, প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ যদি দিনের পর দিন খারাপ হয়ে যায় আর এতে ভয়ানক ঝুঁকিতে পড়ে দেশের ফসলি জমি; তবে তা কতটা উৎকণ্ঠার সহজেই অনুমেয়। এমন আশঙ্কাও উঠে আসছে যে, অদূর ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদনে বড় ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। জানা যাচ্ছে, নানা কারণে দেশের মাটি ভয়ংকর মৃতু্য ঝুঁকিতে পড়েছে, এখন মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধির যে চ্যালেঞ্জ তা মোকাবিলায় যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
আমলে নেওয়া সমীচীন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি টন। যেখানে আগামী ২০ বছরে ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি করতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, দেশে নিট ফসলি জমি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর, যা আগামী দিনের খাদ্য উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে, আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, নতুন ঘরবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তৈরি, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজে আবাদযোগ্য জমি বছরে প্রায় ৭৯ হাজার হেক্টর কমে যাচ্ছে। এ রকম এক পরিস্থিতিতে ক্রমাগত ফসল ফলানোর কারণে এবং মাটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উবর্রতাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের উর্বর অংশ তুলে নেওয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে ফসলের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটি এখন ভয়ংকর হুমকির মুখে রয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে ৫ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'মাটির পরিচর্যা: পরিমাপ, পরীক্ষণ ও পরিচালন'।
আমরা বলতে চাই, যেসব কারণে মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে তা আমলে নিতে হবে, উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একজন কৃষিবিদ বলছেন, মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ যা পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাটি হচ্ছে কৃষির মূল ভিত্তি। উর্বর মাটি না হলে ভালো ফসল পাওয়া যায় না। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিকভাবেই মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের মোট আবাদি জমির ৭৯ ভাগেই মারাত্মক জৈব ঘাটতি তৈরি হয়েছে। মাটিতেই পাঁচ শতাংশ জৈব উপাদান থাকার কথা থাকলেও তা এক শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। তার মতে, জমির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে- একই জমিতে বছরে একাধিকবার ফসল চাষ এবং মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার। এতে ভেঙে পড়ছে মাটির স্বাস্থ্য। তিনি এটাও জানিয়েছেন, এ ধারা চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে চাষযোগ্য কোনো জমি থাকবে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার, কীটনাশক ও সংবেদনশীল হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণে ভালো নেই মাটির স্বাস্থ্য। জমির মাটি হয়ে গেছে বিবর্ণ, অনুর্বর- ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না। মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) গবেষণা বলছে, এক দশকের ব্যবধানে দেশের আবাদি জমিতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ উলেস্নখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। আবার ক্ষতিকর নাইট্রোজেন ভূগর্ভস্থ হয়ে পানিতে মিশে যাচ্ছে, তা মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গত কারণেই যে বিষয়গুলো উঠে আসছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।