২৪ জুলাই, ছাত্র জনতার গণ-অভু্যত্থান ছিল আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রতি ছাত্র সমাজের দৃঢ় অঙ্গীকার প্রকাশিত হয়েছিল। এই আন্দোলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল একটি শক্তিশালী কল। এর মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় চেতনায় নতুন দিশা দেখা দেয়। কিন্তু, অত্যন্ত হতাশাজনক বিষয় হলো- ওই আন্দোলনের পক্ষে লেখালেখি ও সক্রিয় ভূমিকা রাখা লেখকদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও মূল্যায়ন দেয়নি জাতীয় গ্রন্থাকেন্দ্র।
একের পর এক প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মাধ্যমে যারা ছাত্র জনতার গণ-অভু্যত্থানকে বেগবান করতে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের কাউকেই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভাগের বইমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি বইমেলার আয়োজনে গণ-অভু্যত্থানের বিশাল গুরুত্ব ও তাৎপর্যও ফুটিয়ে তোলা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রশ আসে- জাতীয় গ্রন্থাকেন্দ্রের নতুন পরিচালক কি ছাত্র জনতার অবদানকে ভুলে গেছেন? তাঁর পদোন্নতি কি শুধুমাত্র একটি উপরি পদ, না কি এটি আসলেই আন্দোলনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ?
ছাত্র জনতার গণ-অভু্যত্থান ছিল একটি ঐতিহাসিক লড়াই, যার ফলে দেশে রাজনৈতিক সচেতনতা এবং সমাজের প্রতি ছাত্রদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় ফুটে উঠেছিল। কিন্তু, যখন এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট থেকে সৃষ্ট সাহিত্য ও লেখকরা তাদের অবদান রাখতে চেয়েছিলেন, তখন তাদের কোনো প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এমনকি, বইমেলা বা এর আয়োজনে আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অজানা বা অস্বীকার করা হয়েছে।
এটি একটি গভীর দুঃখজনক ঘটনা, যেখানে শুধু আন্দোলনের ইতিহাসই বিকৃত হচ্ছে না, বরং আমাদের দেশের নাগরিক সমাজের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধাও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ছাত্র জনতার ত্যাগ ও আন্দোলনের পক্ষে যারা লেখালেখি করেছেন, তাদের প্রতি অবজ্ঞা জাতীয় চেতনার জন্য ক্ষতিকর।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি জাতীয় গ্রন্থাকেন্দ্র এবং এর পরিচালকরা ছাত্র জনতার গণ-অভু্যত্থানের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে প্রস্তুত? নাকি তাদের কৃতজ্ঞতা শুধুমাত্র শাসকগোষ্ঠীর প্রতি? এই ধরনের অবস্থা আমাদের জাতীয় চেতনায় গভীর চিহ্ন রেখে যাবে।
আমাদের সকলের উচিত, জাতীয় ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করা এবং ছাত্র জনতার ভূমিকার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো।
ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র
অতিথি পাখি শিকার নয়
ঋতুচক্রের আবর্তনে আমাদের দেশে শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে। শীতকালের আগমন ঘটার সঙ্গে নিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা আসে উত্তর মেরু থেকে। সাইবেরিয়া, উত্তর ইউরোপ, হিমালয় পর্বত, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্কটিকাসহ অনেক অঞ্চলে অপমাত্রা মাইনাস শূন্য ডিগ্রিতে নেমে আসলে তখন সেগুলোতে প্রচন্ড খাদ্যাভাব দেখা দেয়। তীব্র শীতে পাখির দেহ থেকে পালক খসে পড়ে। প্রকৃতি যখন পাখিদের জীবন ধারণের জন্য অনুকূলে থাকে না, তখন নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এসব পাখিদের গ্রহণ করে নেয় অতিথি পাখি হিসেবে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে বাংলাদেশে। আমাদের দেশের হাওড়, বিল ও চরাঞ্চলে দেখা যায় হাজার হাজার অতিথি পাখি। এ সময় অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে প্রকৃতি। পাখিদের শারীরিক গঠন অনেক মজবুত হয়। অতিথি পাখিরা এ জন্য ৬০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিটার উঁচু আকাশসীমা পাড়ি দিয়ে উড়ে আসতে পারে। কিছু পাখি ২২ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসে আমাদের বাংলাদেশে। বাংলাদেশ হয়ে ওঠে তখন এসব অতিথি পাখিদের খাদ্য ও নিরাপদ আবাসস্থল। বালিহাঁস, বক, বুনো হাঁস, খঞ্জনা, ছোট সরাস, গাংকবুতরসহ আরও নাম না জানা অনেক প্রজাতির অতিথি পাখিদের দেখা যায় বাংলাদেশের ঝোপ-জঙ্গল, মাঠ-ঘাট এবং জলাশয়ে। নিঝুম দ্বীপ, হাকালুকি হাওড়, টাঙ্গুয়ার হাওড়সহ বাংলাদেশের ২৮টি জায়গা রয়েছে এসব পাখিদের জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম স্থান। প্রকৃতির ক্ষতিকর পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ প্রভৃতি খেয়ে এরা ফসলের ও জলজ প্রাণীদের রক্ষা করছে। কিছু পাখি প্রাণী ও উদ্ভিদের বংশবিস্তারেও সাহায্য করে। অতিথি পাখি প্রকৃতি ও পরিবেশের বন্ধু। আবার যখন উত্তর মেরুর দেশগুলোতে শীতের প্রকোপ কমে যায় তখন অতিথি পাখিরা ছুটে যায় নিজ জন্মভূমিতে। আবারও হাজার হাজার মাইল পারি দেয় তারা। কিন্তু শীত মৌসুমে বাংলাদেশে অতিথি পাখি এলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখি আসাটা কমে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। অতিথি পাখি কম আসার পেছনে মূলত মানুষের কিছু কর্মকান্ডই দায়ী। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং শিকারিরা ফাঁদ ও জাল তৈরি করে রাখেন শীতের আগে থেকে। গুলি করে, বিষ টোপ ব্যবহার করে, জাল পেতে আরও বিভিন্ন উপায়ে তারা শিকার করে থাকে এসব অতিথি পাখি। শীতকালে বাজারে প্রকাশ্যে অতিথি পাখি বিক্রি করতে দেখা যায়। অসাধু ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ মূল্যে এসব পাখি বিক্রি করে থাকেন। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত। অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো- বাস্তবে এই আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। ফলে অসাধু মানুষেরা নির্বিচারে পাখি শিকার করেই যাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের সচেতনতাই বন্ধ করতে পারে অতিথি পাখি শিকার। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে পশুপাখি, জীবজন্তুসহ সব প্রাণীর প্রতি সদাচার করা উচিত। যেসব এলাকায় অতিথি পাখি আসে, সেসব এলাকায় অতিথি পাখি নিধন সম্বন্ধে সচেতনতামূলক সভা করতে হবে এবং পরিবেশবাদী সংগঠনকে শিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। যেসব অসাধু মানুষ পাখি শিকার করে এবং বিক্রি করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুয়ায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অতিথি পাখির অবদান রয়েছে। অতিথি পাখি অতিথিদের মতোই তাই তাদের সঙ্গে অতিথিদের মতোই আচরণ করতে হবে। তারা আমাদের সম্পদ। তাই অতিথি পাখি শিকার নয়; বরং তাদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করা এবং অতিথি পাখির প্রতি মানবিক হওয়া জরুরি।
অনিন্দীতা দাস
শিক্ষার্থী
রাজশাহী কলেজ