সহিংসতা ও গণপিটুনি বন্ধে সঠিক পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গত নভেম্বর মাসের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মাসে মানবাধিকার পরিস্থিতি কিছুটা অস্থির ও সহিংসতায় পূর্ণ ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরে কমপক্ষে ১০৩টি 'রাজনৈতিক সহিংসতার' ঘটনায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৬ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৯৯ জন। সহিংসতার ১০৩টি ঘটনার মধ্যে ৫১টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে, ২৩টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে। এতে আরও বলা হয়, এ মাসে অন্তত ২৭টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪৬ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এটি উদ্বেগজনক যে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা বন্ধের দাবিতে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বর মাসে গণপিটুনির কমপক্ষে ২১টি ঘটনায় নিহত হয়েছে ১২ জন। একই মাসে ৩৬টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৬ জন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকারের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছু বিষয়ে উন্নতি ঘটলেও, সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। নভেম্বর মাসটিতে আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, আইনজীবী হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, শ্রমিক হত্যা, কারা হেফাজতে মৃতু্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নির্যাতন ও হত্যা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিকে ঘিরে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সংঘর্ষ ছিল এই মাসের সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়- যা দেশের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কেবল তাই নয়, দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং সংঘর্ষের অন্তত ১২টি ঘটনায় কমপক্ষে ২২৫ জন আহত হয়েছেন। ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃতু্যর অভিযোগের জেরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যান হামলাকারীরা- যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নভেম্বর মাসে কমপক্ষে ১১০ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩২ জন, যাদের মধ্যে ১৭ (৫৩ শতাংশ) জন ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনজন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩১ জন। উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
যদিও সহিংসতার বিষয়টি এ দেশের অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অংশ, একইভাবে গণপিটুনিও। অন্যদিকে, সমাজে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বহু আগে থেকেই। যার প্রতিকার দৃশ্যমান নয়। তবুও বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।