রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৮.৭ শতাংশ মানুষ বাহিনীটিকে 'রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত' করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি নেওয়ার কারণে তোপের মুখে থাকা পুলিশকে 'পাল্টে ফেলতে' গঠিত কমিশন গত রোববার এ ফল প্রকাশ করেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যেম জানা যাচ্ছে, 'কেমন পুলিশ চাই' শিরোনামে এ সমীক্ষা শুরু হয় গত ৩১ অক্টোবর। নির্ধারিত ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তাতে অংশ নেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, প্রাপ্ত ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইনের শাসনে অনুগত ও নিরপেক্ষ পুলিশ চেয়েছেন ৮৬.২ শতাংশ এবং দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চেয়েছেন ৮৪ শতাংশ মানুষ।
আমরা মনে করি, প্রাপ্ত ফল সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে বলা দরাকর, এর আগে বারবার এমন আলোচনা উঠে এসেছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে অনাস্থার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, পুলিশের প্রতি যদি অনাস্থা তৈরি হয় তবে তা সামগ্রিকভাবে উদ্বেগের। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং সামিগ্রক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না।
তথ্য মতে, এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৩৪ বছর, যাদের হার ৪২.৭ শতাংশ। উত্তরদাতাদের মধ্যে চাকরিজীবী ৩৬.৪ শতাংশ, ছাত্র ২৭.২ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী ৭.৬ শতাংশ। জানা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন ঢাকা জেলা থেকে, ২০.৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম, অংশগ্রহণকারীদের ৭.৫ শতাংশ সেখানকার, আর কুমিলস্নার ক্ষেত্রে এই হার ৫ শতাংশ। আমরা মনে করি, যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
লক্ষণীয়, পুলিশের কোন ক্ষেত্রে সংস্কার সবচেয়ে বেশি জরুরি, এমন প্রশ্নের উত্তরে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান' চেয়েছেন ৮৯.৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ফলে, এই দিকটি কোনোভাবেই উপেক্ষাযোগ্য নয়। পুলিশকে সত্যিকারে জনগণের বন্ধুরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এছাড়া, জানা যাচ্ছে, পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭.৯ শতাংশ উত্তরদাতা এবং গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মতো অপরাধের জন্য পুলিশের জবাবদিহি ও শাস্তি চেয়েছেন ৭৪.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। অন্যদিকে, 'ভুয়া' ও 'গায়েবি মামলা' দিয়ে বিরোধীদের দমনের 'অপসংস্কৃতির' অবসান চেয়েছেন ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ভুয়া বা গায়েবি মামলার ভয়ভীতির মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা চেয়েছেন ৮১.৯ শতাংশ। বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দল-মত দমনে মাত্রারিক্ত বল প্রয়োগকারী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েছেন ৭১.৫ শতাংশ মানুষ। এছাড়া, সমীক্ষায় দেখা গেছে, সভাসমাবেশ আয়োজনে মহানগর পুলিশের অনুমতি নেওয়ার যে বিধান আছে সেটিকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে মনে করেন ৫১.৮ শতাংশ উত্তরদাতা। আমলে নেওয়া দরকার, খবরের মাধ্যমে এটাও উঠে এসেছে যে, সংবিধানের ৩৭নং অনুচ্ছেদে সভা-সমাবেশ আয়োজন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন আইন-১৯৭৬ এর ২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী পুলিশ কমিশনারকে 'জনস্বার্থে' সর্বোচ্চ ৩০ দিন সমাবেশ স্থগিত করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। অন্যদিকে, উত্তরদাতাদের শতকরা ৮২.৫ শতাংশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারাকে 'সহজে অপব্যবহারযোগ্য' বিধান বলে মনে করেন। ৪৬.২ শতাংশই ধারাটির যুগোপযুগী সংস্কার চান। এক্ষেত্রে ৩৯.৭ শতাংশ উচ্চ আদালতের সুপারিশ মতে ৫৪ ধারায় বিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়া, হেফাজতে বা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে 'নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে' জানিয়ে ধারাটির সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা বিচার বিশ্লেষণ করা এবং পুলিশের কমর্কান্ড, রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহারসহ যে সব বিষয় আলোচনায় আসছে তা এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু এবং মানুষের আস্থা ফিরে আসবে এমনটি কাম্য। আর এই লক্ষ্যে উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।