অর্থনীতির সব সূচকেই যেখানে মন্দাভাব, সেখানে একমাত্র প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সেই আশার আলো দেখা যাচ্ছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সে ধারা অব্যাহত রয়েছে অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরেও। নভেম্বরের পুরো সময়ে এসেছে প্রায় ২২০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) যা প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ১ ডিসেম্বর রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি। গত চার মাস রেমিট্যান্স আসছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোট ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১২২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এছাড়া ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলার এসেছে বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে। এ সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ৯টি।

এর আগে, দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার।

শেখ হাসিনা সরকারের করা বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ যখন বাড়ছে তখন রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পাশে থাকছেন প্রবাসীরা। ফলে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। উলেস্নখ্য, ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা জুলাই মাসে রেমিট্যান্স বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে আগের চেয়ে বেশি গতি বেড়েছে প্রবাসী আয়ে। এতে শক্তিশালী হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

অতীতে দেখা গেছে, সাধারণত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো উৎসবকে ঘিরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু এবারই প্রথম বড় কোনো উৎসব ছাড়া এত বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্সের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সেটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা। প্রবাসীরা দেশের গণ-অভু্যত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশ এখন আমার, এ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রবাসীরা মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের উৎসবে শামিল হচ্ছেন।

রাষ্ট্র উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

প্রবাসীদের এ উৎসাহ ধরে রাখতে হলে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশ যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তাহলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। আমরা মনে করি, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড হবে, দেশের রিজার্ভ সংকটও কেটে যাবে। দেশও মুক্ত হবে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি থেকে।