কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা- এমন খবর বারবার সামনে এসেছে। এছাড়া, এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সঙ্গত কারণেই বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানী ঢাকার বাতাস শনিবার ছিল অস্বাস্থ্যকর। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৬২। এ মান 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া, তথ্য মতে, শনিবার বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল সপ্তম। এ সময় ৪৮৯ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল ভারতের দিলিস্ন। বলা দরকার, এর আগে, শুক্রবার সকালেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর ছিল। এছাড়া লক্ষণীয়, ঢাকা ও আশপাশের যে তিন অঞ্চলের দূষণ পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত বেশি খারাপ, সেগুলোর মধ্যে আছে ঢাকার ইস্টার্ন হাউজিং-২, গুলশান-২ ও সাভারের হেমায়েতপুর।
বলা দরকার, বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। আমরা মনে করি, যখন এটা সামনে আসছে যে, শনিবার বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল সপ্তম এবং ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর তখন এটি আমলে নিতে হবে। এছাড়া, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বলা দরকার, এর আগে জানা গিয়েছিল যে, সরকার ঢাকার বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে উলেস্নখ করে পরিবেশ ও পানি উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, এক্ষেত্রে ঢাকার চারপাশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ বায়ুদূষণ রোধের ব্যবস্থা না করে নতুন ভবন নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। খোলা ট্রাকে বালু বা ইট বহন করা যাবে না। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়াও রাস্তায় গাড়ির যত্রতত্র হর্ন বন্ধ করাসহ যেসব কারণে বায়ুদূষণ হয় তা আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়ে দেশের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ফলে, বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
স্মর্তব্য যে, এর আগে এমনটি জানা গিয়েছিল- বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল যে, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্র, পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ নানা কারণ উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা এই বিষয়টি উৎকণ্ঠার- যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে, যখন আবারও বায়ুদূষণ সংক্রান্ত তথ্যে জানা গেল রাজধানী ঢাকার বাতাস শনিবার ছিল অস্বাস্থ্যকর তখন তা আমলে নিতে হবে। সার্বিকভাবে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অন্যদিকে, এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, বায়ুদূষণ রোধ না হলে সেটি উদ্বেগের। এছাড়া, সংশ্লিষ্টদের এটাও বিবেচনায় রাখা দরকার, বায়ুদূষণে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ফলে, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।