গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে খালেদা জিয়া

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি যে মানসিক নির্যাতন ভোগ করেছেন তা নজিরবিহীন। খালেদা জিয়া আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবেন, এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফারজানা ইসলাম
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে। জিয়াউর রহমান দায়িত্বভার নিয়েই তিনি জনগণের দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তার শাহাদাত বরণের পর দেশ এক গভীর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকটে পতিত হয়। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির প্রয়োজনে এবং জনসাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি হতে না হতেই ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ এক রক্তপাতহীন সামরিক কু্য'র মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেন। গণতান্ত্রিক কক্ষচু্যত হয়ে রাষ্ট্র আবার অন্ধকার সুড়ঙ্গে পথ হারালো। এমতাবস্থায় রাজনীতিতে নবীন খালেদা জিয়া স্বামীর দেখানো পথ ধরেই সামাজিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। হাঁটতে থাকেন মাইলের পর মাইল, গ্রামের পর গ্রাম। মানুষকে কাছে টেনে নেন জাদুকরী নেতৃত্বের পরশে। এভাবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া নিরলস সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে সুদৃঢ় সামাজিক নেতৃত্ব গড়ে তুলে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপদানের মধ্য দিয়ে এরশাদ সরকারের পতন ঘটান। এরপর ১৯৯১-এর সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনেন। এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন আপসহীন গণতান্ত্রিক নেত্রী। কিন্তু গণতন্ত্রের চলার পথ কখনো মসৃণ হয়নি। এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী দালাল ও তাদের বিদেশি প্রভুদের বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গণতন্ত্র তার গতিশীল বলয় থেকে ছিটকে পড়ছে বারবার। বিগত চার দশকেরও অধিককাল ধরে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিরলস নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আজ গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনের নানান চড়াই-উতরাই উত্তরণে তিনি কখনো প্রতিবেশী বা কোনো পরাশক্তির সঙ্গে আপস করেননি। তাই বাংলাদেশের আপামর জনগণ তাকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলেই বিশ্বাস করে। আর এ দুটো কারণেই খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বেশি ভয়। তাই যে করেই হোক বেগম জিয়াকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিতাড়িত করতে হবে। ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই ২০০৭-এ আবির্ভাব ঘটে এক-এগারোর তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক সামরিক সরকার। ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৭-এ এই সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগারে পাঠাল। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চালানো হলো ব্যাপক মানসিক নির্যাতন। কিন্তু তিনি দেশ ও দেশের জনগণকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নে বিন্দুমাত্র সহমত প্রকাশ করেননি। বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হীনমানসিকতা নিয়ে আঁটতে থাকল নানান ষড়যন্ত্রের ফাঁদ। সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের বাইরে রেখে ০৫ জানুয়ারি, ২০১৪-এ শেখ হাসিনার সরকার এক প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঢুকিয়ে দিলেন। গণতন্ত্রহীন সমাজে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন বেগম জিয়া। তার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ২০২০-এ ২ বছর ১ মাস ১৭ দিন কারাভোগের পর বেগম জিয়াকে 'মানবিক বিবেচনায়' সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে প্রথমে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হলো। ধাপে ধাপে মুক্তির মেয়াদও বাড়ল। কার্যত মুক্তির শুরু থেকেই তিনি ফিরোজাতে 'গৃহবন্দি' অবস্থায় ছিলেন। এর পরের ঘটনা সবাই জানেন। ছাত্র-জনতার রক্তে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে মুহূর্তের মধ্যে শেখ হাসিনার পনেরো বছরেরও অধিকালের ক্ষমতার মসনদকে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলল। ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ দলীয় মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকর্মীদের মৃতু্যর অনলকুন্ডে ফেলে দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দেশ শাসনের দায়িত্বভার অর্পিত হয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর। মুক্ত হন খালেদা জিয়া। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি যে মানসিক নির্যাতন ভোগ করেছেন তা নজিরবিহীন। খালেদা জিয়া আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবেন, এ প্রত্যাশা দেশবাসীর। ফারজানা ইসলাম : কবি ও সামাজিক উদ্যোক্তা