মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

নদীদূষণ

প্রতিকারে উদ্যোগ নিন
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
.

বাংলাদেশের বুক চিরে ছোট-বড় অনেক নদনদী বয়ে গেছে। এছাড়া, আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষের জীবনজীবিকা নদী পথের সাহায্যেই গড়ে উঠেছে। এসব নদী যাতায়াত ও পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করে তুলেছে। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নদনদীর গুরুত্ব ও প্রভাবও অপরিসীম। কিন্তু তারপরেও নদী ভরাট, কলকারখানার বর্জ্য, জাহাজের তেল, নগরের ময়লা আবর্জনা ইত্যাদির কারণে নদী দূষিত হচ্ছে। ফলে, নদীদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, টাঙ্গাইলে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জনবসতি ঘেঁষে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে চালকল বা অটোরাইস মিল। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি বা তাগিদ না থাকায় চালকলগুলোতে ইটিপি পস্ন্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে না বলেও জানা যাচ্ছে। কারখানার গরম পানি, ছাই ও দূষিত বর্জ্যে আবাদি জমি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে নদীদূষণ। জানা গেছে, জেলার চালকল কারখানাগুলোর মধ্যে ১০-১২টি ছাড়া অধিকাংশই পরিবেশের নিয়মনীতি মেনে স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে কারখানার গরম পানি, ছাই ও দূষিত বর্জ্যে আবাদি জমি ও নদীদূষণ হচ্ছে। অনেকেই বলছেন- কালিহাতী উপজেলায় অটোরাইস মিলগুলো গড়ে ওঠায় এবং মিল বা কারখানার গরম পানি ও অপসারিত বর্জ্য ফটিকজানী নদীতে ফেলার কারণে নদীর জলজপ্রাণি ও মাছ মরে গেছে। এ নদীকে ঘিরেই এক সময় তাদের একটি মৎস্যজীবী সমিতি গড়ে ওঠেছিল। নদীতে মাছ না থাকায় সমিতিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়া, প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অবৈধ দখল আর দূষণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার নদী ও খাল। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি কাজ। উপজেলার- আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদী, উপজেলা সদরের গয়নাঘাটা-চাঁদশী, গৌরনদী বন্দর আশোকাঠী, দক্ষিণ পালরদী, মাহিলাড়া, বাটাজোড়, সরিকল, নলচিড়া গরঙ্গল, ভুরঘাটা-টরকী চেংগুটিয়া-রামসিদ্ধি, বার্থী, খাঞ্জাপুরসহ প্রায় সব খালের উভয় তীর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা অবৈধ স্থাপনা এমনটি খবরে উঠে এসেছে। এছাড়া, অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা টরকী বন্দরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুইটি খাল। আমরা বলতে চাই, শুধু টাঙ্গাইল বা বরিশাল নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদীদূষণ সংক্রান্ত যে তথ্য উঠে আসে তা উদ্বেগজনক। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, নদী দখল, দূষণ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। মনে রাখা দরকার, মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ডের কারণে মূলত নদী দূষিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে নদীদূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো- অবৈধ দখল, অবৈধভাবে শিল্পায়ন ও উন্নয়নের নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং শিল্পকারখানার বর্জ্যপদার্থ- এই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। এছাড়া, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলকারখানা ও শহরাঞ্চলের বর্জ্যপদার্থ নদীতে ফেলে নদীর পানিকে দূষিত করা হচ্ছে। নৌকা ও জাহাজ থেকে তেল নিঃসরণের ফলেও নদী দূষিত হয়। কৃষি জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক বৃষ্টিতে ধুয়ে নদীর পানিতে মিশে নদীর পানিকে দূষিত করছে। নদীতে গবাদি পশুর গোসল, মৃত পশুপাখি, পরিত্যক্ত আবর্জনা ফেলার কারণেও নদী দূষিত হচ্ছে। এছাড়া, দখলদাররা নদী পাড়ে ও নদীর উপর শিল্পায়নের নামে বিভিন্ন স্থাপনা ও কারখানা তৈরি করছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে দেশের নদীদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিন। দখলদারিত্ব দূর করা ও দূষণ রোধ করে নদীর নাব্য ফেরাতে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জনবসতি ঘেঁষে ফসলি জমিতে গড়ে উঠবে চালকল বা অটোরাইস মিল, কারখানার গরম পানি, ছাই ও দূষিত বর্জ্যে নদীদূষণ হবে, অবৈধ দখল আর দূষণে ভরাট হয়ে যাবে নদী ও খাল- যার প্রভাব পড়বে জীববৈচিত্র্যের ওপর- এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে