মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

দুর্বল ব্যাংক লেনদেন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ ইতিবাচক

  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুর্বল ব্যাংক লেনদেন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ ইতিবাচক

সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলোয় টাকার সংকটের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আর এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, নগদ টাকা নিয়ে সংকটে থাকা ছয়টি ব্যাংকের লেনদেন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এজন্য এসব ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তথ্যমতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও টাকার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই সহায়তাও দেবে। এ ছাড়া সব ব্যাংক আমানতকারীর পাশে সরকার আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। মূলত তারল্য নিয়ে যে ছয়টি ব্যাংক সমস্যায় রয়েছে, সেই ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

আমরা বলতে চাই, ব্যাংকের যে কোনো সংকট নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, তারল্য নিয়ে যে ছয়টি ব্যাংক সমস্যায় রয়েছে, সেই ছয়টি ব্যাংক হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলোকে বড়ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ব্যাংক নিবিড় তদারকিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক আমানতকারীর জমা করা অর্থের সুরক্ষা দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। আমলে নেওয়া দরকার, কোনো ব্যাংকে তারল্য সমস্যা হলে তাতে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গর্ভনর। এ ছাড়া আমানতকারীদের স্বার্থ পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকবে বলেও জানান।

আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি যেন সংকট নিরসন হয়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান বিশ্বে সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে এই খাতের যে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হলে তা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। বলা দরকার, এর আগে এটা জানা গিয়েছিল, আমানতের সুদহার বাড়ানোসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের ব্যাংকগুলোর টাকার সংকট কাটছে না। এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক সংকট আরও বেড়েছে এমন তথ্যও সামনে এসেছিল। সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ, আমানত প্রবৃদ্ধি ও ঋণ পুনরুদ্ধারে ধীরগতি এই বিষয়গুলোও আলোচনায় আসে।

আর এখন যখন নগদ টাকা নিয়ে সংকটে থাকা ছয়টি ব্যাংকের লেনদেন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এমনটি জানা যাচ্ছে তখন তা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও এক্ষেত্রে বলা দরকার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য টাকা ছাপানোর বিপক্ষে ছিলেন গভর্নর, এখন কেন সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললেন, এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। যার জবাবে তিনি বলেছেন টাকা ছাপানো হবে না, এ সিদ্ধান্ত থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাময়িকভাবে সরে এসেছে। তবে ব্যাংকগুলোকে তারল্যসহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি টাকা ছাপানো বলা যাবে না। এখানে এক হাতে বাজার থেকে টাকা তুলে অন্য হাতে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে। মুদ্রানীতি আগের মতো সংকোচনমূলক থাকবে বলেও জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া ১০ টাকা ধার দিয়ে ১০ টাকা বাজার থেকে তুলে নিলে কোনো সমস্যা হবে না। এটা এক ধরনের স্টেরিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহারের মতো এই আলোচনাও উঠে এসেছে। গভর্নর জানিয়েছেন, 'আমাদের বড় লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি কমানো ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।'

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট সংকট নিরসন জরুরি। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য, বিগত আওয়ামী সরকার টাকা ছাপিয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটাতে টাকা ছাপার উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক এটা যেমন বিবেচ্য, তেমনি তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহক হয়রানি বেড়েছে বলেও জানা গিয়েছিল। তবে আগের সরকারের সময় যেভাবে টাকা ছাপানো হয়েছে, তার সঙ্গে এর পার্থক্যের বিষয়ে গভর্নর বলেছেন, 'এসব ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। টাকা চুরি বন্ধ করা হয়েছে। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে। সূচকগুলো নিয়মিত তদারকির মধ্যে আনা হয়েছে।' আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে