শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

  ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের দেশে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হলেও নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়নি। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে উৎপাদক, বিপণনকারী থেকে ভোক্তা- সব পর্যায়ের অংশীজনকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। গত বুধবার সকালে 'সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য: সমতা ও টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্য ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দিয়েছেন।

এটা সত্য, ভেজাল ও দূষিত খাদ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। ২০২১ সালের বিএফএসএর জরিপ অনুসারে দেশের ৪০ শতাংশ খাদ্যে ভেজাল রয়েছে। এই ভেজাল খাদ্য ৩৩ শতাংশ বয়স্ক মানুষ ও ৪০ শতাংশ শিশুর অসুস্থতার কারণ। বাজারের ৬০ শতাংশ শাকসবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও ৬৭ শতাংশ বোতলজাত সয়াবিন তেলে ট্রান্সফ্যাট এবং অধিকাংশ জেলার মাটিতে প্রয়োজনীয় জৈব উপাদানের অভাবের কারণে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক মাত্রা ও নিয়ম সম্পর্কে কৃষকদের মাঠপর্যায়ে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। তাদের মধ্যে যে স্মার্ট কৃষি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তা কাজে লাগাতে হবে। তবে কেবল কৃষিপণ্যের উৎপাদন নিরাপদ করলেই হবে না, খাদ্য ভেজালমুক্ত রাখা, দূষণমুক্ত রাখার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণত চকচকে বা উজ্জ্বল ধরনের সবজিকে টাটকা বলে ভাবা হয়, এগুলোতে রাসায়নিক সার বেশি প্রয়োগ করা হয়। জৈব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত শাকসবজি দেখতে এতটা ভালো দেখায় না বলে ক্রেতাদের আগ্রহ কম থাকে। এসব বিষয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শুধু কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেই খাদ্য নিরাপদ হবে না। পোলট্রি ও মাছ চাষের ক্ষেত্রে যে বিপুল পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে মানবদেহে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

ভুলে গেলে চলবে না, বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে, বাংলাদেশের মানুষকে কিডনি রোগ, ক্যানসারসহ নানাবিধ মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে হলে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলে যেন খাদ্য ভেজাল ছাড়া পৌঁছে সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। যেহেতু একটি রাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হলো খাদ্য, সেহেতু খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

মনে রাখা দরকার, কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। কৃষির ওপর আমাদের অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। তবে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত সুষ্ঠু উদ্যোগই কেবল পারে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে