শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
পাঠক মত

দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার নিম্নমান

  ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার নিম্নমান

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকা, পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার এবং নার্সের অভাব এবং প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এর অন্যতম কারণ। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য রোগীদের ব্যাপক চাপ থাকলেও চিকিৎসকের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। ফলে অনেকেই সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এই চিত্র আরও করুণ। একইসঙ্গে, বেসরকারি খাতে চিকিৎসা খরচ এত বেশি যে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এটি বহন করা প্রায় অসম্ভব। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকেই বিদেশমুখী হচ্ছেন, যা জাতীয় অর্থনীতির ওপরও চাপ তৈরি করছে। এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বাংলাদেশকে একটি বড় সংকটের মধ্যে ফেলেছে। ভুল চিকিৎসা ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে রোগী পড়ার ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়, যা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং অব্যবস্থাপনার জন্য কুখ্যাত। হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক। অনেক সময় চিকিৎসা থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করে খোলা জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়, যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সংক্রামক রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী। হাসপাতালগুলোর শৌচাগারগুলো অস্বাস্থ্যকর এবং পানির সরবরাহও প্রায়শই অপর্যাপ্ত। রোগী ও তাদের স্বজনদের বসার জায়গা বা থাকার ব্যবস্থা এমনকি মিনিমাম স্বাস্থ্যবিধি মানার মতো পরিবেশও নেই। এতে করে রোগীদের সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে নতুন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক বেড নেই। ফলে একজন রোগীর সঠিকভাবে চিকিৎসা পেতে অন্য রোগীর জায়গায় ভাগ বসাতে হয়। আবার ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রেও অনিয়ম দেখা যায়। প্রায়ই রোগীরা অভিযোগ করেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় তাদের বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে বাধ্য করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার মান কিছুটা ভালো হলেও সেখানকার উচ্চ খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সাধারণ চিকিৎসা সেবার জন্য যেখানে সরকারি হাসপাতালে কম খরচে সুযোগ পাওয়ার কথা, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ কয়েকগুণ বেশি। গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থাও ভয়াবহ। সেখানে স্বাস্থ্যসেবার জন্য আধুনিক সুবিধার অভাব তো রয়েছেই, পাশাপাশি অনেক সময় দক্ষ ডাক্তারও পাওয়া যায় না। স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে প্রশিক্ষিত নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী না থাকার কারণে সাধারণ রোগও সময়মতো সঠিকভাবে চিকিৎসা পায় না।

বরাদ্দ করা বাজেট জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম।

সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি বিদ্যমান। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি রয়েছে, যা রোগীদের সঠিক সেবা পেতে বাধা সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব এবং তদারকির দুর্বলতাও বড় সমস্যা। রোগী এবং স্বজনদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং এই বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালের বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় আধুনিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করতে হবে। সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিতে হবে, যাতে তারা সেখানে কাজ করতে আগ্রহী হন। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রোগী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়ন শুধু নাগরিকদের সুস্থ জীবনই নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এজন্য সরকার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

হালিমা আক্তার হানি

রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে