শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যাংকে টাকার সংকট কাটছে না সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে

  ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ব্যাংকে টাকার সংকট কাটছে না সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে

আমানতের সুদহার বাড়ানোসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের ব্যাংকগুলোর টাকার সংকট কাটছে না। ফলে, কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক সংকট আরও বেড়েছে। সংকটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ, আমানত প্রবৃদ্ধি ও ঋণ পুনরুদ্ধারে ধীরগতি। বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ব্যাপক আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকিং খাতে সাধারণ মানুষের আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংকট কাটানোর উদ্যোগ নিলেও ব্যাংকগুলো টাকার অভাব কাটাতে পারেনি। অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর বলেছিলেন, ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে নতুন করে টাকা ছাপানো হবে না। এর পরিবর্তে তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রতিদিনের পরিচালন চাহিদা মেটাতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ঋণ নিতে হিমশিম খাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৯০ দিনের মেয়াদি ঋণের সুদের হার সর্বকালের সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ শতাংশে উন্নীত হয়। একইভাবে নভেম্বরে তলবি মুদ্রাবাজারে (কল মানি) এক দিনের (ওভারনাইট) সুদের গড় হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। গত বছরের একই মাসে তা ছিল আট দশমিক ১৯ শতাংশ। ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, সম্পদ ও দায়বদ্ধতার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা থেকেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোয় সম্পদ বাড়লেও একটি উলেস্নখযোগ্য অংশে আছে মন্দ ঋণ। এটি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম। এসব খেলাপি ঋণের কারণে নতুন করে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকে টাকা না আসায় তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। উপরন্তু পাচার হওয়া টাকা ও ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার সম্ভাবনা সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে দিয়েছে। এসব ঘটনা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সুদের হার বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে বেশি সুদ নিতে বাধ্য হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। মন্দ ঋণে টাকা আটকে থাকায় অনেক ব্যাংক, বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের চাহিদা মেটাতে বা নতুন ঋণ দিতে পারছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর নিয়োগের পর এ পর্যন্ত সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো ভালো ব্যাংকগুলো থেকে ছয় হাজার ৮৫০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, সরকার তারল্য সংকট কাটাতে টাকা ছাপার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে। বিগত আওয়ামী সরকার টাকা ছাপিয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কাটাতে টাকা ছাপার উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখতে হবে। এটা সত্য তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহক হয়রানি বেড়েছে। গ্রাহকরা ১০ হাজার টাকার ওপরে তুলতে পারছেন না। আমরা মনে করি, দ্রম্নত এই সংকট কাটিয়ে উঠতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে