শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রেনের ধাক্কায় ৭ জন নিহত কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

  ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ট্রেনের ধাক্কায় ৭ জন নিহত কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। আরও ভয়াবহ হলো, দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। সড়ক, রেল, নৌপথে একের পর এক বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। ফলে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যখন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কুমিলস্নায় ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আর এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। উলেস্নখ্য, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিলস্নার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর রেল ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ- এমনটি জানা গেছে।

আমরা বলতে চাই, ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন- এটি কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং এর ভয়াবহতা অনুধাবন করা এবং কতটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগও নিতে হবে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি দ্রম্নতগতিতে যাচ্ছিল। এ সময় কালিকাপুর এলাকায় একটি অবৈধ ক্রসিং দিয়ে রেলপথ পার হচ্ছিল অটোরিকশাটি। এ সময় ট্রেনটি যাত্রীবাহী অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশায় থাকা ৪ যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও ৩ যাত্রীর মৃতু্য হয়। এটাও জানা গেছে যে, ট্রেনের ধাক্কায় নিহতদের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া জরুরি যে, তথ্য মতে, অবৈধ ক্রসিং দিয়ে রেলপথ পার হচ্ছিল অটোরিকশাটি; ফলে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের বিষয়টিসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া, এটাও স্মর্তব্য, অবৈধ রেল ক্রসিংয়ের কারণে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে, সারাদেশে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে এমনটিও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে- সারাদেশে দুই হাজারের বেশি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ! গেটম্যান নেই অনেক রেলক্রসিংয়ে। অন্যদিকে, বৈধ বা অবৈধ ক্রসিংগুলো বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ফলে, অবৈধ ক্রসিং এবং নিরাপত্তাহীন গেটসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সমস্যা সমাধানে দ্রম্নত পদক্ষেপও নেওয়া দরকার। এছাড়া, রেলপথ পারাপারে অসচেতনতা, কানে হেডফোন দিয়ে রেল পথে হাঁটার সময় দুর্ঘটনাসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ফলে, একদিকে যেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, সচেতনতা বাড়াতেও উদ্যোগ জরুরি।

লক্ষণীয়, এর আগে জানা গিয়েছিল যে, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে ২৪৩টি রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটে যেখানে ২২৭ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হন। আবার এখন যখন সাতজন নিহত হওয়ার মতো ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক দুর্ঘটনা ঘটল, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। যেভাবে দুর্ঘটনায় একের পর এক মানুষ নিহত হচ্ছে, আহত হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ফলে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। স্মর্তব্য, এর আগে নানা ধরনের উদ্যোগের কথা সামনে এসেছে কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। বরং লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ফলে, পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন, যেখানে একটি অবৈধ ক্রসিং দিয়ে রেলপথ পার হচ্ছিল অটোরিকশাটি- সঙ্গত কারণেই এই দুর্ঘটনা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তৎপর হতে হবে। যাত্রাপথ যেমন আধুনিক, সহজ হওয়া জরুরি, তেমনি যাত্রাপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও কোনো বিকল্প নেই। অবৈধ রেলক্রসিংসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে