শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্ববাজারে কম দেশে বেশি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন

  ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিশ্ববাজারে কম দেশে বেশি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন

২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য সার্বিকভাবে ৩ শতাংশ কমেছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরে পণ্যমূল্য কমার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম কমা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অতীতে দাম না কমে, উল্টো দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সঠিক তথ্যউপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্তের অভাব, সরকারের ভুল নীতি, ভুল পদক্ষেপ এবং বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বু্যরোর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে, দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। এটি দেশে গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির এই বিষয়টি শুধু অক্টোবর মাসের বিষয় নয়, বরং গত তিন বছর ধরে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা আর ঠেকানো যায়নি এবং সেটাই এখন এত বড় আকার ধারণ করেছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য ৫ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে তা আরও ২ শতাংশ কমবে। ফলে, পণ্যমূল্য ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে খাদ্যমূল্য ৯ শতাংশ এবং জ্বালানির দাম ৬ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা স্থিতিশীল হয়েছে। যেসব কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছিল, সেগুলো অনেকটাই দূর হয়েছে, যেমন চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা। যদিও এই সময় ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে, বাণিজ্যে বাধা এসেছে, আবহাওয়াজনিত সরবরাহ সংকট হয়েছে। তা সত্ত্বেও পণ্যের দাম কমেছে। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে স্বল্প মেয়াদে এই পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। উৎপাদক স্তর থেকে ভোক্তা স্তর এবং আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তর- এই দুই পর্যায়ে যারা মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাদের হাতে বাজার একচেটিয়াভাবে চলে গেছে। তারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক সময় তারা সরবরাহকে প্রভাবিত করছে। আবার অনেক ব্যবসায়ীরা একটা সাময়িক সরবরাহ সংকট তৈরি করে কোনো কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বা প্রতিযোগিতা কমিশন এসব প্রতিষ্ঠানের খবরদারিতে দুর্বলতা রয়েছে। আর এ কারণেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের উচিত বাজার ব্যবস্থাকে একটা নজরদারির মধ্যে নিয়ে এসে, মূল্যস্ফীতি অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক নজর রাখা। পাশাপাশি বাজারে পণ্যের চাহিদা কত, সরবরাহ কত, উৎপাদন কত, আমদানি কতটুকু করতে হবে এবং সেটা কোন সময়ে করতে হবে, সেই আমদানিটা উন্মুক্তভাবে হচ্ছে কিনা এসব বিষয়ে ভাবা ও সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া। বাজারচিত্র বদলাতে সরকারের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে