শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে- যেখানে সংঘর্ষে জড়িয়েছে স্থানীয় লোকজনও। অন্যদিকে, সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এছাড়াও, এরকম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মানিসকতার ওপর প্রভাব, পড়ালেখা বিমুখ হওয়াসহ নানা কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকে। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষসহ যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য মতে, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল, ন্যাশনাল মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় মোলস্না কলেজের তিন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার দাবি উঠলেও পরে সেখান থেকে সরে এসে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পাশাপাশি নিহত হওয়ার বিষয়টি অপপ্রচার বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছে পুলিশ। তিন কলেজের ওই সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থবর্ষের মঙ্গলবারের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, এর আগে রোববার মধ্যরাতে চা-পান করা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এয়াড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকায় নানা ধরনের অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে এমনটিও খবরে উঠে এসেছিল। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
আমরা বলতে চাই, যে কোনো কারণেই হোক সংঘাত-সংঘর্ষ কাম্য হতে পারে না। ফলে, যেভাবে একের পর এক ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে তা সার্বিকভাবে আমলে নিতে হবে। সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেভাবে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তার ফলে সার্বিক পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে; সেটি অনুধাবন করতে হবে। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
আমরা বলতে চাই, সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার- ফলে, এই আহ্বান শিক্ষার্থীদের আমলে নিতে হবে। এছাড়া, সংশ্লিষ্টদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন থাকলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, 'সম্প্র্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সেদিকে সরকার নজর রাখছে। আমরা ছাত্রছাত্রীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।' আমরা মনে করি, ছাত্রাছাত্রীরা সরকারের আহ্বান আমলে নেবে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোলস্না কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার. সেটিও শিক্ষার্থীদের এড়ানো যাবে না। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে নানা ধরনের আন্দোলন দাবিকে কেন্দ্র করে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেগুলোসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।