অবশেষে জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতি বছর ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) ডলার দেবে শিল্পোন্নত দেশগুলো। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এ অর্থ দেওয়া হবে। দীর্ঘ দরকষাকষির পর রোববার ভোরে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ অর্থায়নের বিষয়ে একমত হন প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধি। তবে, কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর চুক্তিতে ঐকমত্য হলেও সাহায্যের পরিমাণকে অপমানসূচক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সমালোচক আর অনুন্নত দেশগুলো। এছাড়া, চুক্তিটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান পরিবেশবাদীরা। এ বছর বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে বছরে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন (১ লাখ ৩০ হাজার কোটি) ডলার চেয়েছিল। মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম দায়ী উচ্চ হারে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ। যার ৮০ শতাংশ করে থাকে উন্নত দেশগুলো। তাই, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন থেকে আওয়াজ ওঠে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। পরে তহবিল গঠনে একমত হলেও তেমন তোড়জোড় ছিল না অর্থায়নে।
উলেস্নখ্য, জলবায়ু তহবিলে জমা দেওয়া এই অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে এবং দেশগুলোয় জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় খরচ করা হবে। বর্তমানে এই তহবিলে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জমা দিচ্ছে ধনী দেশগুলো।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনে অগ্রাধিকার ছিল অর্থায়নের বিষয়টি। দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনে এ নিয়ে চলে নানা বিতর্ক আলোচনা। শুক্রবার আয়োজনের সমাপ্তি টানার কথা থাকলেও সমঝোতা না হওয়ায় দীর্ঘ হয় আলোচনা। ধনী দেশগুলোর গড়িমসিতে ক্ষুব্ধ হয় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু দরিদ্র রাষ্ট্র। দুর্যোগে পর্যুদস্তু এই দরিদ্র দেশগুলো বিশ্বের দূষণের জন্য দায়ী বিত্তবান দেশগুলোর প্রতিশ্রম্নত এই তহবিলকে 'অপমানজনক ও নগণ্য' হিসেবে অভিহিত করেছে। আলোচনা স্থল থেকে তারা ওয়াকআউট করেন। দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা পর নাটকীয়ভাবে হয় সমঝোতা। একমত হন প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধি। তবে, এতে অসন্তোষ জানায় পানামা, নাইজেরিয়া, কিউবাসহ বেশ কিছু স্বল্পোন্নত দেশ। না মানার ঘোষণা দেয় ভারত।
চুক্তির সমালোচনা করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার শিফট আফ্রিকার পরিচালক মোহামেদ আদোউ বলেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এই কপ একটি বিপর্যয়। ধনী দেশগুলো যারা জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করে, তারাই পৃথিবী ও এর বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যদিও কেউ কেউ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এটা পর্যাপ্ত নয়, তবে এটা শুরু হলো।
এটা সত্য, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ। এছাড়াও, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-সুনামি-অতিবৃষ্টি-খরার ঝুঁকিতে রয়েছে বহুদেশ। এসব মোকাবিলা করেই তাদের টিকে থাকতে হবে। আমরা মনে করি, গরিব দেশগুলোর জন্য এ বরাদ্দ খুই অপ্রতুল। প্রতি বছর ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) ডলার দিয়ে তাদের পক্ষে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এটা ধনী দেশগুলোকে ভেবে দেখতে হবে।