বাড়ছে লাশের সংখ্যা

সড়ক নিরাপদ করা জরুরি

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, অক্টোবর মাসে দেশে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত এবং ৮১৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া, এই মাসে রেলপথে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত, ৩৬ জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন নিহত এবং ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া, লক্ষণীয় এই সময়ে ১৩৮টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ২৩৯ জন আহত হয়েছেন- যা মোট দুর্ঘটনার ৩০.৫৩ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৩১ শতাংশ ও আহতের ২৯.৩২ শতাংশ। মূলত শনিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া নৌপথ, রেল এসব দুর্ঘটনায় মানুষ নিহত হচ্ছে- ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিনিয়ত সড়কে যে দুর্ঘটনার বীভৎস চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই; তেমনি এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগে বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এয়াড়া, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। লক্ষণীয়, অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘটিত ৬৩১টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৪.৪১ শতাংশ মোটর সাইকেল, ২২.৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি, ১৮.৫৪ শতাংশ বাস, ১৭.৯১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৩.৯৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬.৬৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬.০২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, দুর্ঘটনার উলেস্নখযোগ্য কারণগুলো চিহ্নিত করেছে। যার মধ্য দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বৃদ্ধি, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রম্নটি, যানবাহনের ত্রম্নটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি বলতে চাই, পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়কের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়, যেখানে প্রতিনিয়তই মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। থামছে না রেল, নৌ দুর্ঘটনাও। এছাড়া মনে রাখা দরকার, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে- যা কাম্য হতে পারে না। একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।