প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর সব দেশে পলিস্নর সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত কিচ্ছা-কাহিনী, পুরান কাহিনী, ছড়া, প্রবাদ, প্রবচন, গীতা, গীতিকা, ধাঁধা ইত্যাদিকে লোকসাহিত্য বলা হয়ে থাকে। লোকের সৃষ্টি এ সাহিত্য মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে অতীত থেকে বর্তমানে চলে আসে। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষার সাহিত্যের মূল ভিত্তি লোকসাহিত্য। 'রামায়ণ' ও 'মহাভারত' লোকশ্রম্নত স্মৃতির ওপর ভিত্তি করেই রচিত। মধ্যযুগের এমনকি আধুনিক যুগের সাহিত্যের অনেক উপকরণও লোকসাহিত্যের ভান্ডার থেকে এসেছে। গ্রামের অসংখ্য অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নর-নারী, রসপিপাসা নিবৃত্তের জন্যই এর সৃষ্টি। এ লোক সাহিত্যের রচয়িতারা হচ্ছেন পলিস্নর সুফি সাধক, মাঝি-মালস্না, চাষি, বৈরাগী ও লোককবিরা। বর্তমানে পলিস্নর আনাচে-কানাচে এসব লোকসাহিত্য রচিত হলেও তা মানুষের কাছে পৌঁছায় না। আগের মতো আর জাঁকজমকপূর্ণভাবে বয়াতিদের আসরও বসে না। দিন দিন তা যেন লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পূর্বে অবশ্য বাংলা লোকসাহিত্য সংগ্রহে দীনেশচন্দ্র সেন, কবি জসীমউদ্দীন, অধ্যাপক মনসুর উদ্দীন, ড. মযহারুল ইসলাম ও ড. আশরাফ সিদ্দিকীর নাম বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। তাদের মতো বর্তমান সময়ে কেউ বাংলা লোকসাহিত্য সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে কাজ করছে না বিধায় এ সাহিত্য আজ বিলুপ্তির পথে। বাংলা লোকসাহিত্য আমাদের গর্বের বস্তু। আজকে নাগরিক সভ্যতার চাপে এ মূল্যবান সাহিত্য লোপ পেতে বসেছে। পলিস্ন বাংলায় ছড়িয়ে থাকা এ সাহিত্য সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। এ সাহিত্যকে বিলুপ্তির পথ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সমষ্টিগত পরিচয় জানার জন্য, পলিস্ন বাংলার শতকরা আশিজন লোকের সঙ্গে একাত্মতা স্থাপনের জন্য এবং সাহিত্য ও শিল্পক্ষেত্রে নতুন নতুন সৃষ্টিতে তাদেরকে ব্যবহার করে সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করার জন্য লোকসাহিত্য চর্চা করা অত্যাবশ্যক। পরিশেষে, বাংলার লোকসাহিত্যকে বিলুপ্তির পথ থেকে উদ্ধার করতে সংস্কৃতিকর্মী ও সরকারের সংস্কৃতি বিভাগের একযোগে কাজ করা উচিত।
মো. রবিন ইসলাম
শিক্ষার্থী
বাংলা বিভাগ, ঢাকা কলেজ