বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে সব শ্রেণির মানুষের সমাধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন নিম্নশ্রেণি ও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। শীত মৌসুম মানে নিম্নশ্রেণির অসহায় মানুষদের সীমাহীন কষ্ট আর দুর্ভোগের দিনগুলোর শুরু। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া দিনব্যাপী সূর্যের ক্ষীণতাপ প্রকৃতির নানারূপ পরিবর্তনে বয়স্ক ও শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে দেখা দেয় সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানির মতো জটিল রোগের। শীত মৌসুমে কষ্টে থাকা মানুষদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য উপকূলবর্তী অঞ্চল, উত্তরাঞ্চল, রেলস্টেশন, সুবিধাবঞ্চিত, মাঠপর্যায়ের কৃষক ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ।
শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ও কষ্টের শিকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। তাদের নিম্নমানের জীবনযাপন আর স্বল্প আয়ের ফলে তীব্র শীতে তাদের পরিবার শীতবস্ত্র সংকটে ভোগে। শুষ্ক আবহাওয়া ও দিনব্যাপী সূর্যের ক্ষীণতাপের ফলে তাদের দৈনন্দিন আয় ব্যাহত হয়। শীত মৌসুমে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ও পর্যাপ্ত তাপমাত্রার অভাবে শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সবাই বিভিন্ন ধরনের রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগে। তাই শীত তীব্রতা বৃদ্ধির আগেই শীতের শুরুতেই আমাদের উচিত শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সাহায্য প্রদানের জন্য প্রয়োজনবিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
শীতবস্ত্র বিতরণ : আমাদের সমাজ বা দেশের অভ্যন্তরের গরিব মানুষ, যারা শীতের সময় প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে অক্ষম, তাদের মধ্যে বিভিন্ন শীতবস্ত্র শীতকালীন সময় বিতরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সামাজিক সংগঠন : সামাজিক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীমূলক বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলা। যার মাধ্যমে শীতবস্ত্র সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পরে সংগ্রহকৃত শীতবস্ত্র নিম্নপর্যায়ের গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদান : শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর, হাঁপানি ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। এসব রোগের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ প্রদান ও শীতকালীন রোগের বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত : শীতের বৈরী আবহাওয়া নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলো দৈনন্দিন আয়কে স্থবির করে দেয়। ফলে শীত মৌসুমে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো খাদ্য নিরাপত্তায় ভোগে। তাই শীত মৌসুমে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর খাদ্য নিশ্চিতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সামাজিক দায়িত্ব : সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে শীতার্তদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি দেখানো নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের সবার সম্মিলিত ছোট্ট একটি সহযোগিতামূলক উদ্যোগ অন্যের জীবনকে সহজতর করতে পারে। আমরা সাধারণ মানুষ, যারা নিজেদের স্বচ্ছল মনে করি, তারা এই বিষয়টি উপেক্ষা না করে অসহায় মানুষদের জন্য অল্প পরিসরে সাহায্যমূলক অবদানে এগিয়ে আসলে অসহায় মানুষরা সমাজে নতুন জীবন লাভ করবে।
শীতের শুরুতে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু একটি মানবিক কর্তব্য নয়, বরং আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে অসহায় মানুষদের জন্য সাধ্যমতো সাহায্য প্রদানে এগিয়ে আসলে আমাদের দেশ একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
মো. মুজাহিদুল ইসলাম
সম্মান প্রথম বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ
রাজশাহী কলেজ