গুজব সমাজের একটি গুরুতর সমস্যা, যা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সহমর্মিতা এবং আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি এমন একটি সামাজিক ব্যাধি যেখানে কেউ কাউকে অন্যের বিরুদ্ধে গোপনে ভুল তথ্য, অভিযোগ বা নেতিবাচক ধারণা দিয়ে উসকে দেয়। সাধারণত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মানুষ এ ধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়, যা সামাজিক সম্প্র্রীতি ও শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
গুজবের প্রভাব এতটাই ক্ষতিকর যে তা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরেই নয় বরং কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও বড় ধরনের বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। এর পেছনে কিছু মূল কারণ রয়েছে-
প্রথমত, অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে তারা সমাজের সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, কেউ কারও প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করলে সে মানুষটির সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে খারাপভাবে উপস্থাপন করতে চায়। এটি প্রতিশোধ নেওয়ার একটি উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তৃতীয়ত, অনেক সময় গুজব সহজে ঘটে যখন মানুষ নিজেদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব অনুভব করে। এতে কেউ সহজেই গুজব ছড়িয়ে দেয় এবং আরেকজন তা বিশ্বাস করে। চতুর্থত, সমাজের কিছু মানুষ নেগেটিভ মানসিকতায় ভোগে এবং নেতিবাচক আচরণ করতে অভ্যস্ত। তারা নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য অন্যদের ক্ষতি করতে প্রস্তুত থাকে।
গুজবের নেতিবাচক প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে দেখা যায়। এটি সমাজে অশান্তি ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। কিছু প্রধান প্রভাব হলো :
পারিবারিক, বন্ধু, সহকর্মী বা সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যেও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। ভুল ধারণা এবং মিথ্যা তথ্যের কারণে ভালো সম্পর্কেও ফাটল ধরে।
গুজব সামাজিক অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। যখন মানুষ পারস্পরিক আস্থা হারায়, তখন সমাজে শান্তি বজায় রাখা কঠিন হয়ে যায়।
গুজব মানসিকতা সমাজের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। মানুষ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং মানবিকতা হারায়।
যে ব্যক্তি গুজবের শিকার হোন, তিনি অযথা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেন। এতে তার আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই তিনি একা হয়ে পড়েন।
গুজবের মতো ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে :
০১. সমাজে গুজবের অপকারিতা নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে যে গুজব ক্ষতিকর এবং তা সম্পর্কের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে।
০২. পারস্পরিক আস্থা এবং সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মানুষ যখন একে অপরকে বিশ্বাস করতে শিখবে, তখন গুজবের সুযোগ অনেকটাই কমে যাবে।
০৩. ইসলাম আমাদের মিথ্যা বলা, কূটনীতি এবং গুজব থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দেয়। ইসলামের এসব শিক্ষা মেনে চললে আমরা সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করতে পারব।
০৪. গুজব শোনার পর তা বিশ্বাস না করে নিজে যাচাই-বাছাই করা উচিত। অন্যের কথায় সহজেই প্রভাবিত না হয়ে বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
০৫. শিক্ষাব্যবস্থায় সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে, যাতে মানুষ অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহমর্মী হয়।
গুজব একটি অতি কুরুচিপূর্ণ সামাজিক ব্যাধি, যা মানুষের মনোবল, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সামাজিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের উচিত গুজব থেকে দূরে থাকা এবং সমাজের শান্তি ও সম্প্র্রীতি বজায় রাখতে সহায়তা করা। নিজেদের মধ্যে আস্থা এবং সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা গুজবের বিষাক্ত প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারি।
ইমরান ফয়সাল
শিক্ষার্থী : ঢাকা কলেজ, ঢাকা।