নিত্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমছেই না। বিশেষত, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। বাজারে পণ্য সরবরাহে কোনো 'কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে দেওয়া হবে না' বলে কঠোর বার্তা দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে চাহিদা ও জোগানে 'ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ওপর' গুরুত্বারোপ করেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আমরা বাণিজ্যে বেশিসংখ্যক মানুষের সংযোগ বাড়াতে চাই। এর মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ বাড়বে। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর কাছে বাজার জিম্মি থাকবে না এবং সরবরাহে কোনো কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি, টিসিবির পণ্য বিতরণের সার্বিক কার্যক্রম ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আমরা জানি, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও অক্টোবরে তা আবার বেড়েছে। অক্টোবর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যা সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ আর গত আগস্ট মাসে ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অক্টোবরের তথ্যানুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ১০০ টাকার খাদ্যপণ্যে ১২ টাকা ৬৬ পয়সা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে ভোক্তাদের। অক্টোবরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে। যা সেপ্টেম্বরে এক অঙ্কে নেমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ আর তার আগের মাস আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
স্বীকার করতেই হবে কয়েক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি। মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে এই দুটি বড় ভূমিকা রেখেছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে চরম অসুবিধায় পড়ে। কয়েক অর্থবছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশে উৎপন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সব পর্যায়েই মনিটরিং থাকতে হবে- যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে না পারে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল যেসব সংস্থা আছে, সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
তবে শুধু বাজার মনিটরিং দিয়ে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। মনিটরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে মজুতও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।