একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনিভাবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে সেটি নিশ্চিত করারও কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একইসঙ্গে আরও চার কমিশনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিশনার হিসেবে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ।
এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দু'জনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এএমএম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এএমএম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। মূলত সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বেছে নেন। এটা বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির উদ্দীন বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা তিনি করবেন। এছাড়া এ দায়িত্ব যখন আসছে, তা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে- সবার সহযোগিতা নিয়ে, এমন দৃঢ়তাও ব্যক্ত করেন। আমরা প্রত্যাশা করি, তিনি যে দৃঢ়তার সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা তিনি করবেন বলে জানিয়েছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে। জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করবে এবং নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করবে এটি সবারই প্রত্যাশা। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথায়থ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই।
উলেস্নখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, 'পার্টিকুলারলি, বিশাল একটা অভু্যত্থানের পরে এত প্রাণহানি, রক্ত দেওয়ার পরে এত লোক পঙ্গু হলো, আহত হলো, এরপর তারা ভোটের অধিকারের জন্য এতদিন ধরে, ১৮ বছর ধরে যুদ্ধ করছে। তাদের রক্তের সঙ্গে তো আমরা বেঈমানি করতে পারব না।' এছাড়া অবাধ নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি। আমরা মনে করি, তার এই দৃঢ়তা এবং সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। সেই কমিশনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। তাদের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তার আট মাসের মাথায় গণ-অভু্যত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়, গণতন্ত্র সমুন্নত থাকে। স্মর্তব্য, এর আগে বিভিন্ন সময়ে ভোটকে কেন্দ্র করে পেশিশক্তি, অস্ত্রের ব্যবহারসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নতুন নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।