দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। যদিও সরকারিভাবে বলা হয় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। তবে কমবেশি গড় সরবরাহ বর্তমানে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে। এদিকে, শত শত শিল্পকারখানা গ্যাসের সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতেও গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। তারা গ্যাসের লোড বৃদ্ধির অপেক্ষায় বছরের পর বছর ঘুরছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর অফিসে অফিসে। ফলে, কার্যত গ্যাস সংকটের কারণে সবই চলছে ধীরগতিতে। এই যখন অবস্থা, তখন দিন দিন কমছে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের জোগান। পরিস্থিতি উত্তরণে খুব বেশি আশা তৈরি হচ্ছে না দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে। গ্যাসের চাহিদা পূরণে নির্ভর করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর। তবে সেখানেও রয়েছে প্রচন্ড সংকট। কারণ বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ডলারের সম্পর্ক রয়েছে, যে সংকট এখনো কাটেনি। সব মিলিয়ে শিল্প-বাণিজ্য, বিদু্যৎ উৎপাদনসহ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে দেশের জ্বালানির জোগান বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ বর্তমান সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পকারখানায় গ্যাসের অপব্যবহার রোধ করতে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ।
এটা সত্য, সারা বছর বিতরণ কোম্পানিগুলো অভিযান চালাচ্ছে, তবুও ক্রমবর্ধমান হারে শিল্পকারখানায় গ্যাসের অপব্যবহার হচ্ছে। আবাসিক খাতেও গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে নানা ধরনের পরিকল্পা করেছে পেট্রোবাংলা। যার মধ্যে অন্তত ১০০ নতুন কূপ খননের বিষয় রয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনার যৎসামান্য বাস্তবায়ন হয়েছে। ভোলা ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডে নতুন ও পুরনো কিছু কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে- যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ২০১২ সালের পর থেকে সমুদ্রে গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য দফায় দফায় বৈঠক, টেন্ডার আর পরিকল্পনা করাই চলছে। কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে, জ্বালানি খাতে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। গ্যাসের চাহিদা এবং পেট্রোবাংলার চলমান কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- ২০২৬ সাল নাগাদ গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয়ে পড়বে সংস্থাটি। পেট্রোবাংলা যে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে দেখা যায়, আরও অন্তত ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সফলতা আসবে না। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আমদানিনির্ভর এলএনজিই একমাত্র ভরসা। তবে দেশের আর্থিক সংকটে এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে কিনা, সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। কোনো কোনো কোম্পানির সিস্টেম লস মাত্রাতিরিক্ত। যেখানে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সিস্টেম লস বিবেচ্য হতে পারে, সেখানে কোম্পানিগুলোর কোনো কোনো অঞ্চলে ৩০ শতাংশের বেশিও সিস্টেম লস রয়েছে। আমরা মনে করি, সিস্টেম লস কমানোসহ গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার উত্তোলন ও খননে মনোযোগ দিতে হবে।