যদি রাজধানীবাসীর জীবনযাপন বিঘ্নিত হয়, যানজট থেকে শুরু করে নানারকম দুর্ভোগ নেমে আসে তবে তা আমলে নেওয়া জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকায় নানা ধরনের অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে- যা এড়ানো যাবে না। বিভিন্ন ধরনের দাবি, আন্দোলনসহ সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। সঙ্গত কারণেই এ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমেল নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বলে খবরে উঠে এসেছে। সংঘর্ষে দুটি বাস ভাঙচুর করে এতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বাস দুটি ছাড়াও অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের হাত থেকে রক্ষা পায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে হয়েছে। তথ্য মতে, বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ওই এলাকার সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। চার ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘ সময় সড়ক বন্ধ থাকায় যানজটে মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। আরও আমলে নেওয়া দরকার, সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, জানা যায়- মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের বাসে সিটি কলেজের কয়েক শিক্ষার্থীর ওঠার চেষ্টার সূত্র ধরে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আমরা বলতে চাই, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কতটা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বলার অপেক্ষা রাখে না। যা আমলে নেওয়া এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, শুধু এই ঘটনাই নয়, জানা যায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে রাজধানীর দয়াগঞ্জ ও মিরপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিক্ষুব্ধ চালকরা। এ সময় যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে পুলিশ অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দু'পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক সেখানে জড়ো হলে গোটা এলাকা ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া মিরপুরে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা দীর্ঘ সময় কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মধ্যবর্তী এলাকার দীর্ঘ সড়ক অবরোধ করে রাখায় সেখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, শুধু বুধবার নয়, প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাখালী, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, নাখালপাড়া এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ হয়। ফলে, সেসব এলাকায় যানজট তৈরির কথা জানায় পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা সকাল ১০টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেওয়ায় কমলাপুরের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জানিয়েছেন। মূলত- ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, 'ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এটা পুরোপুরি অবৈধ।' এর পরদিনই ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে যে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, নানা কারণে জনভোগান্তি বাড়ছে তা আমলে নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, সংঘাত ও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে যানজট, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। ফলে, যে ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে বা দাবি উঠে আসছে সেগুলো আমলে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। রাজধানী ঢাকার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।