শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

উভয় দেশ যদি উত্তেজনা ও নেতিবাচক মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়, তবে সম্পর্কের অবনতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক দৃঢ় করা যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে গভীরভাবে জড়িত। দুই দেশের সম্পর্ক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মিত্র সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নতুন মাত্রা লাভ করেছিল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিষয় নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা এবং বৈরিতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষত, ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত, নীতি এবং আঞ্চলিক সংকটের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এক ধরনের টানাপোড়েনে পরিণত হয়েছে। এসব সংকটের মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (ঈঅঅ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (ঘজঈ), সীমান্ত সমস্যা, তিস্তা নদীর পানি বিতরণ, রোহিঙ্গা সংকট, এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পরিণতি। এসব বিষয় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় বিশ্লেষকদের মন্তব্য তুলে ধরা হলো। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চট্টগ্রাম, তার কৌশলগত অবস্থান, বাণিজ্যিক গুরুত্ব্ব, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতীয় বিশ্লেষকদের কাছে একটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হিসেবে পরিচিত, যা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জন্যও বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। ভারতের নানা পর্যায়ের বিশ্লেষকরা চট্টগ্রাম নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, কৌশলগত গুরুত্ব এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে।

ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে ভাতীয় মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞ মন্তব্য তুলে ধরা হলো। চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে ভারতীয় বিশ্লেষকদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এবং এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশের এসব অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর হতে পারে। এই অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করা হলে, ভারতের পণ্য পরিবহণের খরচ কমবে, সময় বাঁচবে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত হবে। ভারতের উত্তরের রাজ্যগুলোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে, কারণ, এর মাধ্যমে সমুদ্রপথে সহজভাবে পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব। চট্টগ্রাম থেকে ভারতীয় পণ্য পরিবহণ করলে কোলকাতা বন্দর বা অন্য বন্দরগুলোর তুলনায় ট্রানজিট সময় কম হবে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে। এই দিক থেকে, চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্লেষকদের কাছে অত্যন্ত প্রাধান্য পায়। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সুবিধা সত্ত্বেও, চট্টগ্রামের নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, চট্টগ্রাম বন্দরসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনা পুঁজি এবং বিনিয়োগের প্রবাহ বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থায় এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে অনেকটা বাড়ছে। এটি ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষকদের কাছে উদ্বেগের কারণ, কারণ চীন তার ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য এই অঞ্চলকে একটি কৌশলগত পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বিষয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, মিডিয়া ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ মন্তব্য তুলে ধরা হলো। চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক গুরুত্বের দিক থেকেও ভারতীয় বিশ্লেষকরা বেশ উৎসাহী। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর হওয়ায়, এটি শুধু বাংলাদেশ, বরং ভারতের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, শিল্প উৎপাদন এবং কৃষিপণ্য ভারতীয় বাজারে প্রবাহিত করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, ভারতের মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য রপ্তানির জন্যও চট্টগ্রাম একটি কৌশলগত পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার ভারতের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে, কারণ এটি ভারতীয় পণ্যের বাজারে প্রবেশের জন্য একটি সহজ এবং দ্রম্নততম রুট প্রদান করে। ভারতীয় পণ্যকে কোলকাতা বা হালদিয়া বন্দরের মাধ্যমে পরিবহণের জন্য অনেক সময় ও খরচ ব্যয় হতে পারে, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করলে উত্তর-পূর্ব ভারতসহ অন্যান্য অঞ্চলে পণ্য পরিবহণের খরচ কমে যাবে। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যও বেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা ব্যবহার করার জন্য ভারতের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্যও চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। বর্তমানে, চট্টগ্রামের বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করছে, যেমন পোশাক, মৎস্য, চা, খাদ্যদ্রব্য, এবং ইট-কংক্রিট। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের পণ্য সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে চাচ্ছেন, বিশেষত ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সমস্যা এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্ক বিষয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভারতীয় মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞ মন্তব্য তুলে ধরা হলো। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে অতীতেও নানা সমস্যা ও বিতর্ক ছিল। যদিও ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে, তবুও সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বন্ধ হয়নি। সীমান্তের এই বিষয়ে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা মাঝে মাঝে বিতর্কিত মন্তব্য করে থাকেন, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। যতটা সহজে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়, ততটাই দ্রম্নত তা ভাইরাল হয়ে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন বা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (ই.ঝ.ঋ.) কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করলে, তা দ্রম্নত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও এর পালটা মন্তব্য এবং অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ধরনের মন্তব্য কখনো কখনো রাজনৈতিক বিবৃতি হিসেবে তৈরি হয়, যা দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।

অভিবাসন ইসু্য এবং এনআরসি বিষয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভারতীয় মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞ মন্তব্য তুলে ধরা হলো। ভারতের আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (ঘজঈ) কার্যকরের পর, বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা ব্যাপকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি বাংলাদেশি অভিবাসীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এনআরসি, যেটি ভারতীয় নাগরিকদের চিহ্নিত করার জন্য চালু করা হয়েছে, তার ফলে বাংলাদেশে অনেকেই মনে করেন যে, এতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবৈধভাবে ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়, এবং অনেক বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্ট এটিকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করেন। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নয়, বরং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে এনআরসি বাস্তবায়ন এবং দেশীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় এটা একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়, যা তাদের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তাই ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিষয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা হয়। এই বিষয়টি, যখন সোশ্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্মে বড়ভাবে আলোচিত হয়, তখন বাংলাদেশি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ধর্মীয় ইসু্য এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিতর্ক বিষয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভারতীয় মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞ মন্তব্য তুলে ধরা হলো। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই ধর্মীয় বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ভারতের বিজেপি সরকার এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য উঠে আসে। ভারতে মুসলিম জনগণের প্রতি নরেন্দ্র মোদির সরকারের নীতির বিরোধিতা, বিশেষ করে সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) এবং এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এসব সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং মন্তব্য ভারতের ধর্মীয় পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশিদের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এছাড়া, বাংলাদেশেও সোশ্যাল মিডিয়াতে ইসলাম ধর্মের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকার নিয়ে আলোচনা থাকে। ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে, বিশেষত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়লে, তা ভারতের জন্যও অস্বস্তিকর হতে পারে। ধর্মীয় ইসু্য যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়, তা তখন বাংলাদেশের জনগণের মনোভাবেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য এবং ধর্মীয় মতামত দ্রম্নত ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

রাজনৈতিক মন্তব্য এবং উত্তেজনা বিষয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ভারতীয় মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞ মন্তব্য তুলে ধরা হলো। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোশ্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্মে তাদের ভাষণ ও রাজনৈতিক মন্তব্য দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণের মধ্যে তা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। কখনো কখনো নেতাদের এই ধরনের মন্তব্য একে অপরকে সমালোচনা বা প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে। অতীতে, ভারতের কিছু মন্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচিত হয়েছে। একইভাবে, বাংলাদেশে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

এই বিশ্লেষণকে শুধুই সমালোচনা বা কারোর প্রতি ক্ষোভ বা নিন্দা প্রকাশের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে না দেখলেই হয়তোবা নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হবে। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, আমাদের পড়শি দেশ ভারত আমাদের প্রতি অসৌজন্য বা অবন্ধুসুলভ কেন হবেন। আমরা তো প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বই কামনা করি। আমাদের প্রতিবেশী ভালো থাকবেন, অহিংস হবেন, পরনিন্দামুক্ত হবেন এগুলোই তো ধর্মের কথা এবং নীতির কথা। এটাইতো আমাদের চাওয়া এবং পাওয়া। ভারত আমাদের প্রতিবেশী সম্মানিত হলে প্রকারান্তরে আমরাই সম্মানিত হব এব সুনামেরও ভাগিদার হব। কিন্তু ধর্মীয় মিথ্যাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণে আমাদের প্রতি আগ্রাসী হলে তো সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হবে- যা কারোর জন্যই শুভ নয়। কেননা ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। এছাড়া কারোর ওপরে দৌড়ঝাঁপ ছাড়া তো কাউকে সহজে কুপোকাত করা যায় না। নিজেকে দৌড়ঝাঁপের ধকলও সামলাতে হয়। বিড়ম্বনা ও অশান্তি বাড়ে। নিজের ঘরেও বিভেদ, বিবাদ শুরু হতে পারে। কাজেই অন্যের বাড়া ভাতে নজর দিয়ে নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করার মধ্যে অন্ততপক্ষে কোনো রকমের বাহাদুরি নেই। তবে কি আসাম, পশ্চিম বঙ্গের অনেক এলাকা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের অংশ হওয়ার কথা নয়? সাম্প্রতিককালে ভারতীয় মিডিয়া মৌলবাদ সরকারের দোষারোপ করছে এবং চট্টগ্রামের মুক্তির কথা বলতে চায় এমনকি চট্টগ্রামকে ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অংশ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। আমাদের ৩টি পার্বত্য জেলা নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে পরিস্থিতিকে উত্তেজনাময় করতেও পিছপা হচ্ছে না। এগুলো কতটা ধোপে টিকবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে,

উভয় দেশ যদি উত্তেজনা ও নেতিবাচক মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়, তবে সম্পর্কের অবনতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক দৃঢ় করা যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ :সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে