দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক- এই আলোচনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ আর কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার প্রজনন ও উৎপাত বেড়েছে এমন আলোচনাও নতুন নয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বাংলাদেশে এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; তাতে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ১২০ জনে। এছাড়া, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে এক দিনে আরও একজনের মৃতু্য হয়েছে। তাতে এ বছর মশাবাহিত এ রোগে মোট ৪২২ জনের মৃতু্য হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪০৫ জন, ঢাকা বিভাগে ১৫৯ জন, ময়মনসিংহে ৩৫ জন, চট্টগ্রামে ১৩৭ জন, খুলনায় ১৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৪ জন, রংপুর বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৮৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানা গেছে, এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৪৮ হাজার ৮৯১ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ হাজার ২২৯ জন। অন্যদিকে, এ বছর সবচেয়ে বেশি ৩০ হাজার ৮৭৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন অক্টোবর মাসে, মৃতু্য হয়েছে ১৩৫ জনের। আর নভেম্বরের প্রথম ১৯ দিনে ২০ হাজার ৩০৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, মৃতু্য হয়েছে ১০৭ জনের।
আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। আমলে নেওয়া জরুরি, সম্প্রতি এমন খবর সামনে এসেছে যে, দেশে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। অন্যদিকে, মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে, ডেঙ্গুসংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। স্মর্তব্য, এডিস মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি পায়, সেখানে যেমন ধ্বংস করা দরকার, এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এর আগে এমন আলোচনা উঠে এসেছে- বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে বিভিন্ন জায়গায় এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেহেতু এডিস মশা সংক্রমিত মশা। এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই সংশ্লিষ্টদের সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উলেস্নখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতু্যর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃতু্যও হয় ওই বছর। এছাড়া, ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃতু্য হয়েছিল। ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত এ রোগে ২৮১ জন মারা যান।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন। পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এছাড়া, ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নও অপরিহার্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেভাবে ডেঙ্গু আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তথা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।