বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হয়রানিমূলক মামলা ও প্রকৃত অপরাধী

এটা সত্য এখন অনেক হয়রানিমূলক মামলা হচ্ছে, তাতে অনেক নিরপরাধ লোকদের জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারকে এই ধরনের বাজে প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে একদিকে যেমন আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, অন্যদিকে বিঘ্নিত হবে জননিরাপত্তা। সুতরাং, হয়রানি বন্ধে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
ফারজানা ইসলাম
  ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হয়রানিমূলক মামলা ও প্রকৃত অপরাধী

দেশে যেন হয়রানিমূলক মামলা বা ভুয়া মামলার জোয়ার বইছে। এই ধরনের মামলা নিয়ে কেউ কেউ ব্যবসাও করছে। আওয়ামী লীগ নেতাসহ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা অন্য দলগুলোর নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আমলাসহ অন্য পেশার লোকজনও। কোথাও কোথাও গণমামলায় অনেককে আসামি করা হচ্ছে, কোনো কোনো মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কারও নামে হয়রানিমূলক মামলা করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে তার মন্ত্রণালয় থেকেও এ রকম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ঢালাও মামলার পর এবার গায়েবি মামলা হচ্ছে। মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ অভিযোগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছিল এক বিজ্ঞপ্তিতে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপ অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম বিচার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ঢালাও মামলার বিষয়টি উলেস্নখ করেছে। এতে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের বিষয়টি সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সেটা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ে হওয়া মামলা ও শেখ হাসিনার শাসনামলের পুরনো মামলা উভয় ক্ষেত্রে।

অভিযোগ রয়েছে হয়রানিমূলক মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য বাদীকে অনুরোধ করা হলে বাদীপক্ষ এক লাখ টাকা চেয়েছিল। আসামি ধনাঢ্য হলে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকাও চাওয়া হয়।

দেশের সাধারণ মানুষের মত হচ্ছে, পুলিশ টাকা নিয়ে জেলে ঢোকায়, আবার টাকা নিয়ে বের করে। মামলায় যাদের নাম নেই তাদের পুলিশ ধরে বেশি। এভাবে ভুয়া মামলা চলতে থাকলে দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এটা সত্য, হয়রানিমূলক মামলা দেয়া, মামলায় আসামি ধরা ও ছাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছে। এই ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

হাসিনা সরকারের আগেও আমরা দেখেছি, কেবল রাজনৈতিকভাবে হয়রানিমূলক মামলা নয়, পারিবারিক ও সামাজিকভাবেও হেনস্তা করার জন্য এই ধরনের হয়রানিমূলক মামলা করা হয়। এছাড়া চাঁদাবাজি, বস্ন্যাকমেইলিংসহ নানারকম হয়রানির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে যৌন হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলাও। দেওয়া হচ্ছে যৌতুকের মামলাও। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক মামলা দায়ের বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ।

এই আইনের অধীন দায়েরকৃত কোনো মামলায় আদালত শুনানি ও বিচারান্তে যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাস প্রদান করেন এবং আদালত তাহার রায়ে সুস্পষ্টভাবে উলেস্নখ করেন যে, ওই অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক, তাহা হইলে মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

এটা সত্য এখন অনেক হয়রানিমূলক মামলা হচ্ছে, তাতে অনেক নিরপরাধ লোকদের জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারকে এই ধরনের বাজে প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে একদিকে যেমন আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, অন্যদিকে বিঘ্নিত হবে জননিরাপত্তা। সুতরাং, হয়রানি বন্ধে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

ফারজানা ইসলাম: কবি ও সামাজিক উদ্যোক্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে