আলুর বাজারে অস্থিরতা সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে আলু শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। এটি দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য এবং মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অপরিহার্য অংশ। তবে সাম্প্রতিককালে বাজারে আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বীজ সংকট গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে চড়া দামের ফলে ভোক্তা, কৃষক উভয়েই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অন্যদিকে, সরবরাহের ঘাটতি, চাহিদার অতিরিক্ত চাপ, উৎপাদনে সংকট এবং আমদানিতে সীমাবদ্ধতা আলুর বাজার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গত মৌসুমে কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার আশায় অপরিপক্ব্ব আলু তুলে আগেভাগেই বাজারে বিক্রি করেছিলো। এর ফলে, মৌসুমের স্বাভাবিক উৎপাদন কমে গিয়েছিল। তা ছাড়া, গত মৌসুমে আলু চাষ থেকে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকরা এবার চাষের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছেন। এতে বীজ আলুর চাহিদা উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উৎপাদন ঘাটতি ও বীজের অতিরিক্ত চাহিদা এ দ্বিমুখী চাপে আলুর বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে আলুর বাজারের স্বাভাবিক মূল্যচক্রের ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে এই বছর। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। সাধারণত প্রতি বছর উৎপাদন মৌসুমে আলুর দাম ২০-৩০ টাকা এবং মৌসুম শেষে ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে আলুর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী- যা এখন প্রতি কেজি ৭০-৭৫ টাকা। অন্যদিকে, কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে আলুর দাম বর্তমানে ৬০-৬২ টাকা কেজি, আর বীজ আলুর দাম আরও চড়া, ৮৫-৯৫ টাকা। যদিও ২০২১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে আলুর দাম ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি। ২০২২ সালে তা সামান্য বেড়ে ২২-২৮ টাকায় পৌঁছায়। কিন্তু ২০২৩ সালে এই দাম হঠাৎ বেড়ে ৪৫-৫০ টাকায় ওঠে যায়। চলতি বছর কেজিপ্রতি দাম আরও বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। এদিকে নতুন ফলন মৌসুম শুরু হতে এখনো আড়াই-তিন মাস বাকি। এই পরিস্থিতি ভোক্তা ও উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এক কেজি মোটা চালের চেয়ে আলুর দাম বেশি। তা হলে গরিব মানুষ খাবে কী? খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম আরও বাড়বে। তার মানে কি আলুর কেজি ১০০ টাকা হবে? ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এক সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো, 'ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।' খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। এছাড়াও, আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। এই ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। তারপরেও আলুর দাম বেড়েই চলেছে। আলুর বাজারে চলছে অস্থিরতা। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।