সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির খবর সামনে এসেছে- যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রমিক অসন্তোষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যেখানে উৎপাদন কমে যাওয়া, আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, তৈরি পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। ফলে, এই খাতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কতটা উৎকণ্ঠার বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের একটি কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভের মধ্যে অন্য একটি কারখানার শ্রমিকরাও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আর এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্য একটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। তথ্য মতে, সোমবার সকালে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের পানিশাইল-জিরানি বাজার এলাকায় শ্রমিক সংঘর্ষ ও আগুনের ঘটনায় এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আমরা বলতে চাই, শ্রমিকদের দাবি, সংকট বা সমস্যা যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনিভাবে কেউ যদি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চেষ্টা করে কিংবা জ্বালাও পোড়াও করবে এটাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে, এবারের ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলা দরকার, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে বেক্সিমকোর কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের পাশাপাশি গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। এ সময় শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা জিরানি বাজারের পাশে অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন। গাজীপুরের কাশিমপুর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জও জানিয়েছেন- উত্তেজিত শ্রমিকরা সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অ্যামাজন নিটওয়্যার কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। তখন ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপুর পৌনে ২টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে, এটাও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার- শ্রমিক, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনের মতো সোমবারও বেক্সিমকোর শ্রমিকরা সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন ওই এলাকার আশপাশের অন্তত ২০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। রোববার কারখানা খুলে দেওয়া হলেও সোমবার দুপুরের পর আবারও ছুটি ঘোষণা করা হয়। এটাও জানা যাচ্ছে, সোমবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন, পাঁচ দিন ধরে তাদের বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বকেয়া বেতন পাওয়ার কোনো আশ্বাস তারা পাননি। বেতন পরিশোধ না করলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং বাসায় ফিরবেন না বলেও জানিয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক খাতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল, তাতে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল বিজিএমইএ। ফলে, এই বিষয়গুলো যেমন উদ্বেগের, তেমনি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ যে জ্বালাও পোড়াও পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তাও গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করা। মনে রাখা দরকার, পোশাক খাতের অস্থিরতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এটা স্মর্তব্য যে, তৈরি পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস। ফলে, এই খাতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা দ্রম্নত নিরসন করার বিকল্প নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে পোশাক খাতের ক্ষতি হতে থাকলে সেটি উৎকণ্ঠার। সঙ্গত কারণেই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে বলা দরকার, অস্থিতিশীলতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিতে, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পোশাক খাতের স্বাভাবিকতা জরুরি। সঙ্গতকারণেই পোশাক খাতের স্বাভাবিকতা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।