বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

সমাজ সংস্কারের কর্ণধাররা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছেন?

  ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সমাজ সংস্কারের কর্ণধাররা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছেন?

বাংলাদেশের সমাজের পরিবর্তন এবং উন্নয়নে যেসব পেশাজীবী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন, তারা কি আজ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন? বর্তমান বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে।

প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলীর একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করব কীভাবে শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী এবং দার্শনিকরা সমাজ পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের পতন

বাংলাদেশের রাজনীতি বহু বছর ধরে দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের দ্বারা প্রভাবিত। ড. আকরাম মনে করেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতার উদ্দেশ্য জনগণের সেবা নয়, বরং ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থসিদ্ধি। এই নেতারা সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারেন না কারণ তারা দেশপ্রেম ও নৈতিক গুণাবলির অভাবে ভোগেন।

শিক্ষকতা: পেশা নাকি চাকরি?

শিক্ষকরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার কারিগর। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষকতা এখন আর পেশা নয়, এটি হয়ে উঠেছে কেবল একটি চাকরি। প্রতিশ্রম্নতি ও নৈতিকতার অভাব, পাশাপাশি দুর্নীতি, তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলস্বরূপ, আমাদের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের উপযুক্ত মানসিকতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।

আইনজীবীদের ভূমিকা

আইনজীবীদের বলা হয় 'সামাজিক চিকিৎসক,' কারণ তারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ আইনজীবীরা পেশাগত নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছেন। এর ফলে, দেশের বিচার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য কার্যকর হচ্ছে না।

গণমাধ্যম: সমাজ পরিবর্তনের আয়না?

গণমাধ্যম সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী পরিবর্তনশীল শক্তি হতে পারে। তারা জনমত গঠন করতে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। কিন্তু দুর্নীতি, পক্ষপাত এবং পেশাগত অসততার কারণে গণমাধ্যম এখন আর নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে না।

লেখক ও দার্শনিকদের অনুপস্থিতি

লেখক ও দার্শনিকরা সমাজ পরিবর্তনের নেপথ্যের কারিগর। তারা জাতির দিকনির্দেশনা দেন। তবে, বর্তমান সময়ে তাদের ভূমিকা খুবই সীমিত। অধিকাংশই ব্যক্তিগত স্বার্থে মগ্ন, জাতীয় উন্নয়নে তাদের আন্তরিকতা অনুপস্থিত।

সমস্যার সমাধান কোথায়?

ড. আকরাম আলী মনে করেন, সমাজের এই স্তম্ভগুলোর সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি প্রযুক্তিনির্ভর এবং নৈতিকতা-নির্মাণমূলক শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন- যা নতুন প্রজন্মকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করবে।

ড. আকরাম বলেন, 'একটি কার্যকর সমাজ পরিবর্তনের জন্য কমপক্ষে দুই দশক সময় প্রয়োজন। এটি একটি ধীর এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হলেও এটি সমাজকে উন্নতির পথে পরিচালিত করতে পারে।'

আমাদের করণীয় :

বাংলাদেশের সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে রাজনৈতিক নেতারা, শিক্ষক, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, দার্শনিকদের পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন- যা শুধু উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সুশাসন নিশ্চিত করেই সম্ভব।

সমাজের এই কর্ণধারদের জাগিয়ে তোলার এখনই সময়। অন্যথায়, পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রফেসর ড. এস কে আকরাম আলীর গবেষণা।

সাম্প্রতিক সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে