বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

খেলাপি ঋণ বেড়েছে কার্যকর উদ্যোগ নিন

  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
খেলাপি ঋণ বেড়েছে কার্যকর উদ্যোগ নিন

বর্তমান বিশ্বে ব্যাংক খাতের গুরুত্ব কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দেশে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু গত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ ৭৪ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এছাড়া, গত বছরের তুলনায় এটি প্রায় দ্বিগুণ- যা আমলে নেওয়া জরুরি। বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত উদ্বেগ সামনে এসেছে। এখন যখন জানা যাচ্ছে, দেশে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ; তখন তা আমলে নিতে হবে। উলেস্নখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণ হিসাবের পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাই দ্রম্নত বেড়েছে খেলাপি ঋণ। তবে আওয়ামী লীগ সরকার প্রকৃত খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেনি এমন অভিযোগও রয়েছে। আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণ প্রায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে এটি এড়ানোর সুযোগ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা- যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আমলে নেওয়া দরকার, ব্যাংকাররা বলছেন, নীতি-সহায়তা দিয়ে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ গোপনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মন্দ ঋণ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণেই ঋণ খেলাপির পরিমাণ এত বেড়েছে বলেও আলোচনায় উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণগুলোকে বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

লক্ষ্যণীয়, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে- ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তিন মাসেই ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ ৫ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। জানা যাচ্ছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এই প্রথম খেলাপি ঋণের তথ্য পাওয়া গেছে, ফলে, খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। হঠাৎ খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেছেন-, আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়েছে। আগে টার্ম লোনের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসে ছিল, এখন তা তিন মাস করা হয়েছে। ফলে, খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এছাড়া ব্যবসাবাণিজ্য মন্দা হওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ কম হচ্ছে। এ কারণেও খেলাপি বেড়ে গেছে বলে জানান। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরাই যথার্থ উদ্যোগ নেবে- এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে