দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে- কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। যদিও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা কমেনি।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৭৭ জন। এ সময়ে আহত হয়েছেন ৪১৫ জন। রোববার বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মোটরকার/জিপ দুর্ঘটনায় ৯ জন, বাস/মিনিবাস দুর্ঘটনায় ৪২ জন, ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান দুর্ঘটনায় ৮২ জন, পিকাপ দুর্ঘটনায় ১২ জন, মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় দুইজন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১১০ জন, ভ্যান দুর্ঘটনায় ১২ জন, ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় একজন, ইজিবাইক দুর্ঘটনায় ১৪ জন, ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ১৮ জন, অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ৩৪ জন ও অন্যান্য যান দুর্ঘটনায় ৭৯ জন। এতে আরও বলা হয়, বিভাগভিত্তিক নিহতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৭ জন, খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, বরিশাল বিভাগে ২২ জন, সিলেট বিভাগে ২৩ জন, রংপুর বিভাগে ৫৩ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছেন ৩৫ জন। বিভাগীয় অফিসের মাধ্যমে সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার এ পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে এর আগে উলেস্নখ করা হয়েছিল- দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটর সাইকেলের অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো এবং আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। এ ছাড়াও মহাসড়কের নির্মাণ ত্রম্নটি, যানবাহনের ত্রম্নটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো। আমরা মনে করি, এসব সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।
মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবেই। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।